Business News

Displaying 171-172 of 172 results.

শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তি ৩ দিনে করার সুপারিশ

শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তি ৩ দিনে করার সুপারিশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: ব্যাংকগুলোর একক গ্রাহক ঋণসীমা (সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার) সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানো হবে বলে নিশ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) অনুষ্ঠিত পুঁজিবাজার সমন্বয় কমিটির বৈঠকে এ নিশ্চয়তা দেয়া হয়। একই সঙ্গে সভায় শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তি হওয়ার সময়সীমা ৪ দিন থেকে কমিয়ে তিন দিন করার সুপারিশ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এসকে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, একক গ্রাহক ঋণসীমা সমন্বয়ের সময়সীমা ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল, এটা বাড়ানো হবে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ঠিক রেখে পুঁজিবাজারের জন্য যা যা করণীয় বাংলাদেশ ব্যাংক তা করবে বলেও তিনি জানান। সভা শেষে এসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে বাজারের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একক গ্রাহক ঋণসীমা সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানো ও শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তির সময় এক দিন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শাকিল রিজভী বলেন, বাজারে আর্থিক জোগান বাড়াতে লাইফ ইনস্যুরেন্সের টাকা বিনিয়োগের ব্যাপারে আমরা সুপারিশ করেছি। এ ছাড়া সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) চার্জ কমানো, লেনদেনের ওপর চার্জ কমিয়ে আনা, সব শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা এবং ১০০টি শেয়ারে একটি মার্কেট লট করার সুপারিশ করেছি। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে তিনি মনে করেন। খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে সমন্বয় কমিটির এ সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপ-সচিব নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, সিএসই’র সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদসহ এসইসি’র সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

৫ বছরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে দুই থেকে তিনগুণ : টিসিবির তালিকায় ৪৩ আইটেমের ৩৩টিরই দাম বেড়েছে বছরের মধ্যে

৫ বছরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে দুই থেকে তিনগুণ : টিসিবির তালিকায় ৪৩ আইটেমের ৩৩টিরই দাম বেড়েছে বছরের মধ্যে

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ, টিসিবি’র বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ৫ বছরে নিত্যপণ্যের দাম সর্বনিম্ন ১শ’ থেকে ২শ’ ভাগ পর্যন্ত বেড়েছে। অর্থাত্ দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়েছে। ৫ বছর আগে ২০০৬ সালে স্বর্ণা বা চায়না জাতের মোটা চালের কেজি ছিল ১৭ টাকা। সেই চাল শতভাগ দাম বেড়ে গতকালের বাজারে ছিল ৩৪ টাকা। একইভাবে নাজিরশাল ও মিনিকেটের মতো ২৪ টাকার সরু চালের দাম প্রায় আড়াইগুণ বেড়ে হয়েছে ৫৫ টাকা কেজি। ১৮ টাকা কেজির আটা হয়েছে ৩৩ টাকা। ৪৮ টাকা কেজির খোলা সয়াবিন হয়েছে ১১১ টাকা। ঠিক এক বছর আগেও
টিসিবি’র হিসাবে গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর খোলা সয়াবিন ছিল সর্বোচ্চ ৭৯ টাকা কেজি। ৫ বছর আগের ৩৯ টাকা কেজির খোলা পামঅয়েলের গতকালের বাজারদর ছিল ৯৯ টাকা। ঠিক এক বছর আগে ছিল ৭৪ থেকে সর্বোচ্চ ৭৬ টাকা কেজি। আমদানি করা নেপালি মসুর ডালের কেজি ৫ বছর আগে ছিল ৪৫ টাকা। গতকালের বাজারে সেই ডালের কেজি ছিল ৯৮ টাকা। টিসিবি’র হিসাবে মুগডাল গতকাল সর্বোচ্চ ১২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যেদিন দায়িত্ব নেয় সেদিন চিনির কেজি ছিল ৩০ টাকা। টিসিবি জানায়, গতকালের বাজারে চিনির সর্বনিম্ন দর ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা ছিল। ২০০৬ সালে চিনির কেজি ছিল ৩৭ টাকা। আমদানি করা রসুন ৫ বছর আগে ছিল ২০ টাকা কেজি। আওয়ামী লীগ দায়িত্ব নেয়ার আগের দিন ছিল ২৪ টাকা। গতকাল তা ছিল ৭০ টাকা। ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যে শুকনা হলুদের কেজি ছিল ১২০ টাকা, গতকালের বাজারে সেটি ছিল ২৬০ টাকা। ৫ বছর আগে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ৭০ টাকা, গতকালের বাজারে টিসিবি’র হিসাবে ১৩৫ টাকা। আওয়ামী লীগ সরকার যেদিন দায়িত্ব নেয় তার একদিন আগে ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি টিসিবি’র হিসাবে মোটা চাল ছিল ২৭ টাকা (ঢাকার বাইরে কোথাও কোথাও ২৪ টাকা)। নাজির-মিনিকেট ছিল ৪০ টাকা। আটা ছিল ২৩ টাকা। পামঅয়েল ৪৮ টাকা কেজি। চার্টের বাইরে থাকা গুঁড়োদুধের দামও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে সম্প্রতি।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ঢাকায় প্রতিদিন বাজারদর মনিটর করে। ইদানীং প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে তাদের তালিকায় ১ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত কেজি বা লিটারে দাম কম স্থান পায়। তারপরও তাদের প্রতিবেদনই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য।
চাল, তেল, ডাল, চিনির মতো নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে নিম্নবিত্তের পাশাপাশি এখন মধ্যবিত্তের অনেককেও ওএমএস’র ট্রাকের পেছনে লাইন দিয়ে চাল কিনতে দেখা যাচ্ছে। ভোজ্যতেল ও চিনির ট্রাকের পেছেনেও লাইন দিতে বাধ্য হচ্ছেন মধ্যবিত্তরা। সরকারস্বীকৃত নিত্যপণ্য একসময় ছিল ১০টি আর এখন ১২টি। এগুলো হচ্ছে দু’ধরনের চাল, আটা, দু’ধরনের তেল, চিনি, মশুর ডাল, পেঁয়াজ, আলু ও দু’ধরনের গুঁড়োদুধ। নিত্যপণ্যের বাইরেও দ্রব্যমূল্য, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ঘোষিত জরুরি নিত্যপণ্যের বাইরেও মাছ, মাংস, ডিম, সবজির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। অধিকাংশ সবজির কেজি এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকা। দাম বেড়েছে সব ধরনের মসলারও।
গত ৫ বছরে চাকরিজীবীদের বেতন কিছুটা বাড়লেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির তুলনায় এটা খুবই নগণ্য। কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ায় যারা চাকরি করেন না, তাদের আয় এ সময় অনেক ক্ষেত্রে কমেও গেছে।
টিসিবি তালিকার ৪৩ আইটেমের ৩৩টিরই দাম বেড়েছে বছরের মধ্যে : টিসিবি ১২টি নিত্যপ্রয়োজনীয় ৪৩টি আইটেমের ঢাকার বাজারদর নিয়মিত এখন মনিটর করে। এর মধ্যে গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বরের তুলনায় এ বছর ১৬ সেপ্টেম্বর ৩৩টি পণ্যের দাম বেড়েছে বলে দেখানো হয়েছে। গত আগস্ট মাসের ১৬ তারিখের সঙ্গে তুলনা করেও দেখানো হয়েছে, এক মাসের ব্যবধানে ৩৫টি পণ্যের দাম বেড়েছে। টিসিবি’র বাজারদর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত এক বছরে ভোজ্যতেল, চিনি, অ্যাংকর ডাল, পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, দেশি মুরগি ও গুঁড়োদুধের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ৫৩ দশমিক ৮৫ ভাগ বেড়েছে শুকনা মরিচের দাম। এ সময় ১২০ থেকে ১৪০ টাকার শুকনা মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের দাম শতকরা ৪১ দশমিক ৯৪ ভাগ বেড়েছে। ৭৬ থেকে ৭৯ টাকার খোলা সয়াবিন হয়েছে ১০৯ থেকে ১১১ টাকা। পামঅয়েলের দাম বেড়েছে ৩০ দশমিক ৬৭ ভাগ। ৭৪ থেকে ৭৬ টাকার পামঅয়েল হয়েছে ৯৭ থেকে ৯৯ টাকা। দেশি পেঁয়াজের দাম ২৮-৩০ টাকা থেকে ৪৪ দশমিক ৮৩ ভাগ বেড়ে হয়েছে ৪০-৪৪ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ২৬-২৮ টাকা থেকে ৪৮ দশমিক ১৫ ভাগ বেড়ে হয়েছে ৩৮-৪২ টাকা। গরিবের ডাল হিসেবে পরিচিতি অ্যাংকর ডালের দাম বেড়েছে ৪৮ দশমিক ২১ ভাগ। এ সময় ২৬ থেকে ৩০ টাকার অ্যাংকর ডাল হয়েছে ৪০ থেকে ৪৩ টাকা। চিনির দাম ২৩ দশমিক ১৫ ভাগ বেড়েছে। ৫২-৫৬ টাকা কেজির চিনি হয়েছে ৬৫-৬৮ টাকা। একই সময়ে সরু চালের দাম ১৪ দশমিক ৮১ ভাগ বেড়েছে। মানভেদে ৩৪ থেকে ৪৭ টাকার সরু চাল হয়েছে ৩৮ থেকে ৫৫ টাকা। এর মধে উন্নত মানের নাজিরশাল ও মিনিকেট ৪০-৪৭ টাকা থেকে ১১ দশমিক ৪৯ ভাগ বেড়ে হয়েছে ৪২-৫৫ টাকা। প্যাকেটজাত আটার দাম ৬ দশমিক ৬৭ ভাগ বেড়ে ২৯-৩১ টাকা থেকে হয়েছে ৩১-৩৩ টাকা। একই সময় আলুর দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ২৩ ভাগ। ১২ থেকে ১৪ টাকার আলু হযেছে ১৫ থেকে ১৬ টাকা। ১ কেজির ডানো ব্র্যান্ডের গুঁড়োদুধের দাম ২২ দশমিক ৮৬ ভাগ বেড়েছে। ৪৩০-৪৪৫ টাকার দুধ হয়েছে ৫৩৫-৫৪০ টাকা। ডিপ্লোমা ব্র্যান্ডের গুঁড়োদুধের দাম ১৭ দশমিক ৭১ ভাগ বেড়েছে। এক বছর আগে প্রতি কেজি দুধ যেখানে ৪৩৫ থেকে ৪৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত, টিসিবি’র হিসেবে গতকাল সে দুধের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫১০ থেকে ৫২০ টাকা। গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বরের তুলনায় এ বছর ১৬ সেপ্টেম্বর যেসব পণ্যের দাম কিছুটা কম তালিকার সেই ১০টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে দুই জাতের রসুন, ৪ জাতের ডাল, হলুদ, আদা ইত্যাদি। উল্লেখ্য, এসব পণ্যের দাম এর আগে অত্যধিক বেড়ে গিয়েছিল। সে বিচারে দাম কিছুটা কমলেও সার্বিক বিচারে এসব পণ্যের দামও অনেক বেড়েছে।
টিসিবি’র হিসাবে গত আগস্ট মাসের ১৬ তারিখের সঙ্গে গতকালের বাজারদর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৪৩টি তালিকাভুক্ত পণ্যের মধ্যে যে ৩৫টির দাম বেড়েছে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে আমদানি করা পেঁয়াজ। এক মাসের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এক মাস আগে ৩০ থেকে ৩৪ টাকায় যে পেঁয়াজ পাওয়া যেত গতকালের বাজারে সেটা বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪২ টাকা। খোলা আটার দাম ১৪ দশমিক ৮৯ ভাগ বেড়েছে। ২২ থেকে ২৫ টাকার খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ থেকে ২৮ টাকা কেজিতে। শুকনা মরিচের দাম ১৭ দশমিক ৬৫ ভাগ বেড়ে ১৫০-১৯০ টাকার মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২২০ টাকায়। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ২২ ভাগ। ২২-২৪ টাকা হালির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৬ থেকে ২৭ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে দাম কমার তালিকায় ৮টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে ছোলা, খেজুর, ব্রয়লার মুরগি, দেশি রসুন, হলুদ, আদা, ইলিশ মাছ।
প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ আওয়ামী লীগ সরকার : বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে অন্যতম একটি প্রচার ছিল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে ব্যর্থতা। নির্বাচনী প্রচারে এটাও ছিল বড় হাতিয়ার। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ও তাদের জোটের নির্বাচনী ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার সুস্পষ্ট ঘোষণা ছিল। এমনকি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নৌকায় ভোট দিয়ে ১০ টাকা কেজির চাল খাওয়ার ঘোষণায় মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতা ছেড়েছে ২০০৬ সালের অক্টোবরে। এর মধ্যে পার হয়েছে ৫ বছর। ড. ইয়াজউদ্দিনের ২ মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সেনা ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সরকারের ২ বছর শেষে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ৩৩ মাস বা পৌনে ৩ বছর পার করেছে।
এমনকি ড. ফখরুদ্দীনের জরুরি সরকারের দায়িত্ব ছাড়ার দিনেও যে দামে বিভিন্ন নিত্যপণ্য পাওয়া যেত এখন সে দামে আর কোনো পণ্যই পাওয়া যায় না। সবকিছুর দাম বেড়েছে। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া ফখরুদ্দীন আমলের সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে নিত্যপণ্যে। বিএনপির ক্ষমতা ছাড়ার সময়ের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ দামও হয়ে গেছে অনেক নিত্যপণ্যের। আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর জরুরি সরকারের আমলে অত্যধিক বেড়ে যাওয়া কয়েকটি পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু সে ধারা খুবই অল্পদিন স্থায়ী হয়। এর পেছনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় বলে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরাও স্বীকার করেছেন। এর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেই বলেছেন, ৫/৬ জন লোক চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। একই ধরনের আভিযোগ এসেছে ভোজ্যতেলে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে।
সবাই জানেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার নির্বাচনের আগে দেশের মানুষকে ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর স্লোগান দিয়েছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একাধিক জনসভায় ১০ টাকা কেজিতে মোটা চাল খাওয়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। সবিস্তারে এটা এর আগে আমার দেশ পত্রিকায় ও অন্য কিছু মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। যদিও এখন আওয়ামী লীগ এটা অস্বীকার করার চেষ্টা করছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণার অন্যতম ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা। কিন্তু এখন যখন সে সরকারের শেষ বছরের তুলনায় জিনিসের দাম সর্বনিম্ন দ্বিগুণ ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিনগুণ বেড়েছে তখন সরকার কী জবাব দেবেন, তা আমাদের জানা নেই। শুধু তাই নয়, মাঝেমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও কিছু মন্ত্রী বলার চেষ্টা করেন, মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকারের তুলনায় তারা জিনিসের দাম অনেক নামিয়ে এনেছেন। কিন্তু সরকারি তথ্যই বলছে ভিন্ন কথা। মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের সময় মাঝখানে মোটা চালসহ কিছু জিনিসের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার যেদিন তাদের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেয়, তার ঠিক আগের দিন নিত্যপণ্যের কী দাম ছিল, সেটা আমার দেশসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল। সরকারের কাছে এ তথ্য সংরক্ষণ করা আছে। পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে চার্টে আমরা সে তালিকা তুলে ধরেছি। মূল্য পর্যালোচনার ক্ষেত্রে সেটাও স্থান পেয়েছে।
তিন বছরের মধ্যে আকাশছোঁয়া মূল্যের আরও কিছু পণ্য : শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের পৌনে তিন বছরের মাথায় জিনিসপত্রের যে তালিকা টিসিবি দিয়েছে, তার মধ্যে বেশকিছু পণ্য রয়েছে যেগুলোর দাম এই পৌনে তিন বছরের মধ্যে কোনো কোনো সময় আরও অনেক বেশি ছিল। টিসিবির গতকালের মূল্যতালিকা অনুযায়ী হলুদ, রসুন, আদা ও শুকনো মরিচের দাম ২০০৬ সালের তুলনায় এখন প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু গত বছর এগুলোর দাম দ্বিগুণ অর্থাত্ ২০০৬ সালের তুলনায় চারগুণে পৌঁছেছিল। টিসিবির হিসেবে গতকাল বাজারে শুকনো মরিচের কেজি ছিল মানভেদে ১৮০ থেকে ২৬০ টাকা। গতবছর তিনশ’ টাকা। কিন্তু গতবছর প্যাকেটজাত শুকনো মরিচের কেজি সর্বোচ্চ ৪৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রসুনের বাজারেও ছিল একই অবস্থা। গতকাল যে রসুন বিকিয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, গত বছর একই দিনে সে রসুন ছিল দ্বিগুণেরও বেশি, ১৩৫ থেকে ১৫৫ টাকা কেজি। শুকনো মরিচের ক্ষেত্রে ঘটেছে কিছুটা ব্যতিক্রম। গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর যে শুকনো মরিচের কেজি ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, গতকাল এটা বিকিয়েছে মানভেদে ১৮০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি। প্যাকেটজাত মরিচের দাম আরও বেশি। কাঁচামরিচের ঝালও গত তিন বছরে বেশ কয়েকবারই মানুষ টের পেয়েছে। গত ঈদের পরপর ঢাকার বাজারে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা কেজিতেও কাঁচামরিচ বিকিয়েছে। রোজার মধ্যে দেড়শ থেকে দুইশ’ টাকা বিকিয়ে কয়েকবার পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। পেঁয়াজের কেজিও কিছুদিন এ সরকারের আমলে ৮০ টাকা বিকিয়েছে। ভালো মানের পেঁয়াজ নতুন করে দাম বেড়ে এখনও ঢাকার বাজারে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি গতকালের বাজারদরে দেখিয়েছে ৪৪ টাকা। ৫ বছর আগেও ব্রয়লার মুরগির ডিমের হালি যেখানে ছিল ১২ টাকা, সেটা গতকাল ছিল ২৬-২৭ টাকা। ব্রয়লার মুরগির ডিমের হালি এ সরকারের আমলে দীর্ঘদিন বিকিয়েছে ৩২ টাকায়। ব্রয়লার মুরগিও রোজার শুরুতে ১৮০ টাকা কেজি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। চিনির কেজি রোজার শুরুতে কিছুদিন ৮০ টাকায় বিকিয়েছে, যা ৫ বছর আগে ছিল ৩০ টাকা। ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেও কয়েকবার এমনটি হয়েছে। এমনকি সয়াবিন লিটারে ১২ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি ১৩০/১৪০ টাকায় পৌঁছে। বাজার থেকে তখন উধাও হয়ে গিয়েছিল সয়াবিন। বাজার থেকে উধাও হওয়ার তালিকায় ছিল চিনিও। নিয়মিত দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি এভাবেই মাঝেমধ্যে কোনো কোনো পণ্যের দাম হঠাত্ করে লাফ দিয়ে বেড়ে যায়। সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা।
গত বৃহস্পতিবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে বলে দাবি করে এজন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর এ খবরটি আমার দেশসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে যেমন গতকাল প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি পাশাপাশি আরেকটি খবরও রয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়। সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিসংখ্যান ব্যুরো তাদের আগস্ট মাসের মূল্যস্ফীতির হিসাব প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং কেবল খাদ্যদ্রব্যে মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ। সরকারের টার্গেটের মূল্যস্ফীতির এটা প্রায় দ্বিগুণ। তারপরও দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর দাবিতে প্রশ্ন জেগেছে, দাম আর কতটা বাড়লে প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক বলবেন।