টানা পঞ্চম দিনে পুঁজিবাজারের দরপতন
টানা পঞ্চম দিনে পুঁজিবাজারের দরপতন
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রেসিডেন্ট আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, শুধু লিখিত আবেদন পেলেই পুঁজিবাজারে নির্দিষ্ট কয়েকটি কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখবে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। গতকাল ডিএসইতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ডিএসই প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন। ডিএসই প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা শুনেছি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজেরাও উপলব্ধি করছি সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কিছু স্বল্প মূলধনী কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। কিন্তু যারা এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা এর সঠিক তথ্য তুলে ধরে আমাদের লিখিতভাবে জানাতে হবে। নতুবা ডিএসই কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে কিছুই করার নেই। ডিএসই প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, বিনিয়োগকারীদের কাছে টাকা আছে, তারা যেকোনো শেয়ার যেকোনো দামেই কিনতে পারেন। এতে আমরা কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারি না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ডিএসই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করে তা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানাতে পারে। তবে তিনি আশ্বস্ত করেন, ভবিষ্যতে সার্ভিল্যান্স প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী করা হবে। প্রসঙ্গত কিছু দিন ধরে দেশের দুই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নির্দিষ্ট কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে চলেছে। গত এক মাসে কোনো কোনো কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে কয়েক শ’ শতাংশ। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে তিনি ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) আয়োজিত পুঁজিবাজারবিষয়ক সম্মেলনে যোগদানের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে ইসলামিক ইনডেক্স গঠনের মাধ্যমে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর বিনিয়োগ আমাদের পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে। এখন এ ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে মালয়েশিয়ার। সঠিক উদ্যোগ নিলে পুঁজির বিশাল এ উৎস থেকে আমরাও উপকৃত হতে পারি। সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএসই প্রেসিডেন্ট বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সুদ মওকুফের নেয়া স্কিমের জন্য যে ৩০০ কোটি টাকার তহবিল ইতোমধ্যে ছাড় করা হয়েছে সেখানে এখনো প্রয়োজনীয় আবেদন জমা পড়েনি। যত দ্রুত এ আবেদন জমা পড়বে তত দ্রুতই এ ব্যাপারে সুরাহা করা হবে। এ দিকে দরপতনের টানা পঞ্চম দিন পার করল দেশের পুঁজিবাজারগুলো। গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দরপতনের এ প্রবণতা গতকাল ২৩ সেপ্টেম্বরও অব্যাহত ছিল। ভালোভাবে দিন শুরু করেও শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি পুঁজিবাজারগুলো। দিনশেষে দুই বাজারেই সূচকের অবনতি ঘটে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ডিএসইএক্স সূচক ১৫ দশমিক ৭০ ও ডিএসই -৩০ সূচক ১৬ দশমিক ৯১ পয়েন্ট হ্রাস পায়। দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচক যথাক্রমে ৩৮ দশমিক ৮২ ও ২৪ দশমিক ২৯ পয়েন্ট অবনতি ঘটে। তবে নেতিবাচক প্রবণতায় দিন অতিবাহিত হলেও গতকাল উভয় বাজারে লেনদেন কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকায় আগের দিনের ৪১৪ কোটি টাকার স্থলে গতকাল লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৫২১ কোটি টাকা। চট্টগ্রামে ৩৬ কোটি টাকা থেকে লেনদেন পৌঁছে ৪৪ কোটি টাকায়। যথারীতি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় গতকাল লেনদেন শুরু হয় দুই পুঁজিবাজারে। প্রথম কয়েক মিনিট সূচকেরও কিছুটা উন্নতি ঘটে। ঢাকা শেয়ারবাজারে আগের দিন লেনদেন শেষ করা ডিএসইএক্স সূচকের চার হাজার ৩৬ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করে প্রথম দিকে সূচকটি চার হাজার ৫৩ পয়েন্টে উঠে যায়। এর পর যথারীতি বিক্রয় চাপের কবলে পড়ে বাজার। দিনের শেষ পর্যন্ত এ মন্দা অব্যাহত থাকলে প্রধান সূচকটির ১৫ দশমিক ৭০ পয়েন্ট হারায় ডিএসই। অপর সূচক ডিএসই-৩০ কমে যায় ১৬ দশমিক ৯১ পয়েন্ট। টানা পাঁচ দিন ধরে দুই পুঁজিবাজার সূচকের এ অবনতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা মনে করেন, কোনো কারণ ছাড়াই টানা পতনের শিকার হচ্ছে পুঁজিবাজারগুলো। কিছু কিছু কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি যদিও সূচকের পতন রোধ করছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভালো শেয়ারগুলো বিশেষ করে ব্যাংক, বীমা ও জ্বালানি খাতের মতো প্রধান প্রধান খাতগুলোতে প্রতিনিয়তই দরপতন ঘটছে। গতকাল ঢাকা পুঁজিবাজারে লেনদেন হওয়া কোম্পানির বেশির ভাগ মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় উঠে এলেও সূচকের অবনতি রোধ করা যায়নি। কিন্তু এর মধ্যেও থেমে নেই নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। ডিএসইর ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী গতকাল কমপক্ষে ৪৪টি কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৮ শতাংশের বেশি। এদের মধ্যে লেনদেনের বড় একটি সময় ধরে বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের বিক্রেতা ছিল না। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে টেক্সটাইল খাতের কোম্পানি তাল্লু স্পিনিং। ১৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৪১ লাখ ৯ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় গতকাল। লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল একই খাতের আর এক কোম্পানি সিএমসি কামাল। ১৬ কোটি টাকা লেনদেন করে কোম্পানিটি। ডিএসইর শীর্ষ ১০ লেনদেনকারী কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস, সায়হাম কটন, আর এন স্পিনিং, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, গ্রামীণফোন, জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইস ও বঙ্গজ লিমিটেড।