Largest and fastest growing business Portals
Tweet
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। তবে সেই মুকুট আর কত দিন থাকবে, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের ঘাড়ে ভিয়েতনাম নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। যেকোনো সময়ে দেশটি বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস রিভিউ ২০১৯–এর রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং চীন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ভারত, তুরস্ক, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—এই শীর্ষ দশটি অঞ্চল ও দেশ ৪২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা বিশ্বের মোট রপ্তানির ৮৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে চীন। বৈশ্বিক বাজারে দেশটির হিস্যা ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ।
পোশাক রপ্তানিতে চীনের পেছনেই এক এক করে আছে যথাক্রমে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ৩ হাজার ২৯২ কোটি এবং ভিয়েতনাম ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। উভয় দেশের বাজার হিস্যা এখন প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। গত বছর ১০ শীর্ষ রপ্তানিকারকের মধ্যে বাংলাদেশের বাজার হিস্যা ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে ভিয়েতনামের বাজার হিস্যা বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
ডব্লিউটিওর গত দুই বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভিয়েতনাম পোশাক রপ্তানিতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন ২০১৭ সালে দেশটি ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল। তখন তাদের বাজার হিস্যা ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। মাত্র এক বছরের ব্যবধানেই তাদের রপ্তানির পরিমাণ ৫০০ কোটি ডলার বেড়েছে। বদৌলতে দেশটির বাজার হিস্যা ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আর বাংলাদেশের বাজার হিস্যা কমেছে। ২০১৭ সালে ২ হাজার ৯২১ কোটি ডলারের রপ্তানির বিপরীতে বাজার হিস্যা ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। রপ্তানি ৩৭১ কোটি ডলার বাড়লেও গত বছরের চেয়ে বাজার হিস্যা দশমিক ১ শতাংশ কমেছে।
বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৪৬ ও ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ কমেছে। অক্টোবর মাসেও পোশাক রপ্তানি কমার আশঙ্কা প্রবল। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) পণ্য রপ্তানির তথ্য দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে জানান পোশাকশিল্পের একাধিক উদ্যোক্তা।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘ভিয়েতনাম যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেলে অবাক হব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক চাহিদায় একধরনের পরিবর্তন এসেছে। বিদেশের ক্রেতারা বেছে বেছে কিনছেন, কম কিনছেন। তাঁরা ভ্যালু অ্যাডেড পোশাক চাচ্ছেন। সেটির জন্য হয়তো আমরা এখনো প্রস্তুত না।’
নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ভিয়েতনামে প্রচুর চীনা বিনিয়োগ আছে। সে জন্য তারা বহুমুখী পোশাক উৎপাদনে বেশ এগিয়ে গেছে। তাই আমাদেরও বহুমুখী পণ্য উৎপাদনে চীনা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে।’
ডব্লিউটিওর তথ্যানুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো গত বছর সম্মিলিতভাবে ১৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এ ছাড়া ভারত ১ হাজার ৭০০ কোটি, তুরস্ক ১ হাজার ৬০০ কোটি, হংকং ১ হাজার ৪০০ কোটি, ইন্দোনেশিয়া ৯০০ কোটি, কম্বোডিয়া ৮০০ কোটি এবং যুক্তরাষ্ট্র ৬০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।
পোশাক আমদানিতে শীর্ষস্থানে আছে ইইউ। গত বছর ইইউর সদস্য ২৮টি দেশ ২০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ৯ হাজার ২০০ কোটি, জাপান ৩ হাজার কোটি, হংকং ১ হাজার ৩০০ কোটি, কোরিয়া ও কানাডা প্রতিটি ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার, চীন, রাশিয়া ও সুইজারল্যান্ড প্রতিটি ৮০০ কোটি ডলার এবং অস্ট্রেলিয়া ৭০০ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘ভিয়েতনামের বার্ষিক পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ২২ হাজার কোটি ডলার। তার মধ্যে তৈরি পোশাক তাদের ষষ্ঠ শীর্ষ রপ্তানি পণ্য। তারপরও ভিয়েতনাম যদি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সেটি হবে দুঃখজনক। কারণ তৈরি পোশাক আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে অনেক কাজ হলেও বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের ক্ষমতায় ও প্রযুক্তিতে উন্নয়ন হয়নি। এই জায়গায় দ্রুত উন্নতি করতে হবে। না হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে অনেক পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে ভিয়েতনাম।’
Golden Bangladesh is a point of access to information.We present information from diverse sources in a unified way. It is the leading web portal, e-Directory and business guide in Bangladesh.
Leave a Comment