তিন দুর্বলতায় পুরো সুফল মিলছে না

তিন ধরনের দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দ করা অর্থের পুরো সুফল মিলছে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে। বিচ্ছিন্নভাবে বাস্তবায়ন, অভীষ্ট জনগোষ্ঠী বাছাইয়ে দুর্বলতা ও অদক্ষতা এসব কর্মসূচির পুরো সুফল না মেলার কারণ বলে দাবি করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটির শিরোনাম ‘বাংলাদেশ সোশ্যাল প্রোটেকশন: টুওয়ার্ডস স্মার্ট সোশ্যাল প্রোটেকশন অ্যান্ড জবস ফর দ্য পুওর’। গতকাল বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা কমিশনের সম্মেলনকক্ষে কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ও বিশ্বব্যাংক আয়োজিত সামাজিক সুরক্ষা ও শ্রম খাত নিয়ে এক সেমিনারে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এ প্রতিবেদনে মূলত বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির দুর্বলতা তুলে ধরা হয় এবং তা কাটিয়ে উঠতে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়। সেমিনারে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এটির প্রধান লেখক ও বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ উনইয়ং চো।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশের সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ ছিল প্রায় ১৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৯৯ শতাংশের সমান। চলতি বছর বাজেটে এ খাতে প্রায় ৩৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে, যা জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশের সমান। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে এখন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সংখ্যা ১৪০টির বেশি। এসব কর্মসূচির মধ্যে পর্যাপ্ত সমন্বয় নেই। অনেক ক্ষেত্রেই এর উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়। অনেক সময় একই ব্যক্তি একাধিক কর্মসূচির আওতায় থাকেন।
এসব কর্মসূচির অভীষ্ট জনগোষ্ঠী বা সুবিধাভোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো বৈজ্ঞানিক বা কার্যকর কৌশল নেই উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ কারণে এসব কর্মসূচির একটি বড় অংশের সুবিধা পায় যারা আসলে দরিদ্র নয়। ত্রুটি-বিচ্যুতি ও খাদ্যনির্ভর কর্মসূচির উচ্চমাত্রার প্রশাসনিক ব্যয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কার্যকারিতা ব্যাহত করে।
এসব ঘাটতি দূর করতে কর্মসূচিগুলোর মধ্যে সমন্বয় আনা, দরিদ্র পরিবারের তালিকা তৈরি, খাদ্যভিত্তিক কর্মসূচি থেকে নগদ সহায়তাভিত্তিক কর্মসূচিতে যাওয়া, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশে অনেক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থাকলেও সামাজিক বিমা, পেনশন, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে বলে উল্লেখ করা হয় সংস্থাটির প্রতিবেদনে।
সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। তারপরও বিশাল জনগোষ্ঠী এর মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম বলেন, দরিদ্র পরিবারগুলোর তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ২০২৬ সালের পর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।
শামসুল আলমের বক্তব্যের সূত্র ধরে বেসরকারি সংস্থা পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বর্তমান কর্মসূচিগুলো কার্যকরভাবে পরিচালনা করা গেলে দেশে দারিদ্র্যের হার আরও ৩ শতাংশ কম হতো।
কারিগরি শিক্ষায় ভালো শিক্ষার্থী না পাওয়ার বিষয়ে বলতে গিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, এ শিক্ষায় শিক্ষিতদের আয় বেশি হলে তাদের সামাজিক মর্যাদাও বাড়ত। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের এদেশীয় পরিচালক চিমিয়াও ফান সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি পেনশন ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দেন।
সেমিনারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিল্লার রহমান ও বিশ্বব্যাংকের প্রোগ্রাম লিডার ইফফাত শরিফ বক্তব্য দেন।

তথ্যসূত্র : প্রথমআলো

About Author

Profile Picture

Golden Bangladesh

Golden Bangladesh is a point of access to information.We present information from diverse sources in a unified way. It is the leading web portal, e-Directory and business guide in Bangladesh.

Leave a Comment