অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ চান চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা

Picture

শিল্পকারখানার প্রয়োজনে কোনো সনদ নিতে হলে এখনো ঢাকায় দৌড়াতে হয়। জেনারেটর বসাতে ওয়েভার সনদ, বয়লার বসানোর জন্য সনদ, আমদানি-রপ্তানি নিবন্ধন সনদের অনুমোদনও হয় ঢাকা থেকে। সব ধরনের সনদ ওয়ান স্টপ সার্ভিসের (এককেন্দ্রিক সেবা) মাধ্যমে কখন পাবেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা?
মঞ্চে বসা পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রতি এই প্রশ্ন রাখলেন অতিথিদের সারিতে বসা বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়ব। বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরীর প্রশ্ন ছিল আরও বড় আঙ্গিকে। ‘সব সিদ্ধান্তই এখন ঢাকাকেন্দ্রিক। ফলে ঢাকার বাইরে সম্ভাবনা অনুযায়ী ব্যবসা সম্প্রসারণ হচ্ছে না। উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবসা ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে বিকেন্দ্রীকরণের ব্যবস্থাপনা আশা করতে পারি কি না আমরা?’ একই সমস্যার কথা বললেন চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ।
এই প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল গতকাল রোববার সকালে নগরের র্যা ডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক ব্যবসা সম্মেলনে’। শতবর্ষ উৎসব উপলক্ষে এই সম্মেলনের আয়োজন করে চট্টগ্রাম চেম্বার। মূল বক্তব্যের পরই প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়।
ব্যবসায়ীদের প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী আশার বাণী শোনালেন। তিনি বলেন, ‘দেশে সবকিছু এখন ডিজিটালাইজড হচ্ছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিসও এখানে হবে। ২০১৭ সালের শেষ বা ২০১৮ সালের মাঝামাঝি দেশে কোনো পেপার ওয়ার্ক থাকবে না। ফলে অনেক সমস্যাই তখন আর থাকবে না।’
এর আগে বক্তৃতায় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য জেলায় সরকার সাত বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৫৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চারটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও হচ্ছে চট্টগ্রামে। চার থেকে পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। তিন বছর পর চট্টগ্রাম শহর চেনা যাবে না।’
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন কাশেম খান। মূল প্রবন্ধের বিষয় ছিল ‘দ্য বে অব বেঙ্গল গ্রোথ ট্রায়াঙ্গল অ্যান্ড দ্য মেরিটাইম সিল্ক রুট’। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম।
সালাউদ্দিন কাশেম খান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে ২০ লাখ লোক। এটি আমাদের বড় শক্তি।’ চট্টগ্রামে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল, এলএনজি টার্মিনাল, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মাতারবাড়ী এনার্জি হাব, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ অনেক মেগা প্রকল্প হচ্ছে।
সম্মেলনে কানাডার রাষ্ট্রদূত বেনওয়া পিয়ের লাঘামে বলেন, ‘সমুদ্রসীমার বিরোধ নিরসন হওয়ায় বাংলাদেশের সামনে সমুদ্র অর্থনীতি বাস্তবায়নের বড় সুযোগ আছে। অবকাঠামো, দক্ষ জনশক্তি ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন হলেই বাংলাদেশ লক্ষ্যে পৌঁছাবে।’
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ওলেগ তনকনোজেনকভ বলেন, ‘ভারত, চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এ দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে আমরা কাজ করছি।’
জাইকার জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি হিতোশি আরা বলেন, ‘অবকাঠামো উন্নয়ন সব নয়। এর রক্ষণাবেক্ষণ, সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ এবং সুশাসন গুরুত্বপূর্ণ।’
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবরার এ আনোয়ার বলেন, রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য দরকার। সে ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি, জুতা, খেলনাসহ বহু খাতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এম এ ছালাম বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য পড়ে যাওয়ার পরেও এখানে দাম সমন্বয় না করায় রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাগুলো প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে মার খাচ্ছে।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন শতবর্ষ পূর্তি উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক সাংসদ এম এ লতিফ, মিসরের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইজ্জত, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের প্রথম সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বেঙ্গল চেম্বারের সভাপতি সুতনু ঘোষ প্রমুখ।

তথ্যসূত্র : প্রথমআলো

About Author

Profile Picture

Golden Bangladesh

Golden Bangladesh is a point of access to information.We present information from diverse sources in a unified way. It is the leading web portal, e-Directory and business guide in Bangladesh.

Leave a Comment