বিনিয়োগ পরিবেশের আরও অবনতি

Picture

এমসিসিআইয়ের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ

অর্থনীতি ভালো করলেও সম্ভাবনার তুলনায় পিছিয়ে বাংলাদেশ। এই সম্ভাবনাকে ব্যবহার করা যাচ্ছে না মূলত চারটি কারণে। যেমন অবকাঠামোর সমস্যা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির স্বল্পতা, বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশের অভাব এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) গতকাল বৃহস্পতিবার চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এ কথা বলেছে। এমসিসিআই মনে করে, বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশের কথা বলা হলেও উল্টো দেশে গত এক বছরে বিনিয়োগ পরিবেশ আরও খারাপ হয়েছে।
এমসিসিআই প্রতিবেদনে এ বিষয়ে আরও বলেছে, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর প্রধান শর্ত হচ্ছে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। কিন্তু অনেক বিষয় বিনিয়োগকে নিম্ন মাত্রায় রেখে দিয়েছে। তা ছাড়া দেখে মনে হচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ২০১৩ সাল থেকে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছেন। যদিও এ সময় সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। তবে তা কখনোই বেসরকারি বিনিয়োগের বিকল্প হতে পারে না। আর অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ বেসরকারি বিনিয়োগ।
এমসিসিআই মনে করে, গত এক বছরে বিনিয়োগ পরিবেশ আরও খারাপ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার পরিবেশ-বিষয়ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ দুই ধাপ পিছিয়েছে। ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৭৪তম। আগের বছরে বাংলাদেশ ছিল ১৭২তম স্থানে। বাংলাদেশ মোট ১০ সূচকের মধ্যে ৫টিতে পিছিয়েছে, বাকি ৫টিতে আগের অবস্থানেই আছে। এমনকি বিদ্যুৎ-সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন সর্বনিম্ন অবস্থানে, ১৮৯তম। এখন বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে এখানে ৪০৪ দিনের প্রয়োজন হয়, যা ব্যবসা পরিচালনার ব্যয়কে বাড়িয়ে দেয়। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল এখন ৯৯তম স্থানে, শ্রীলঙ্কা ১০৭তম, মালদ্বীপ ১২৮তম, ভারত ১৩০তম এবং পাকিস্তান ১৩৮তম স্থানে।
এমসিসিআই তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, সামগ্রিক পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসায়ী সমাজ ও বিনিয়োগকারীরা মনে করে, দ্রুত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণের বিষয় সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন। দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে একটি সহায়ক ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ তৈরিতে এই কাজটি করা জরুরি।
অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেশের প্রভাবশালী এই চেম্বার বলেছে, গত ১২ বছরে বাংলাদেশ গড়ে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। সদ্য প্রণীত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রতি অর্থবছর গড়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে, যাতে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হতে পারে। আর তা করতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে, রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে এবং সামগ্রিক অবকাঠামোর মান ভালো করতে হবে।
এমসিসিআইয়ের মতে, বাংলাদেশকে অবশ্যই সড়ক ও রেল খাতের অবকাঠামো উন্নত করতে হবে, বন্দর সুবিধা বাড়াতে হবে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং অবকাঠামোর বাধাগুলো দূর করতে হবে। দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে অবশ্যই সরকারকে এসব কাজ করতে হবে।
চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস নিয়ে এমসিসিআই বলছে, দেশের কৃষি খাত ভালো করলেও এই খাতকে টেকসই রাখতে উপকরণ ও অর্থায়নে সরকারের সমর্থন ও সহায়তা প্রয়োজন। অন্যদিকে অবকাঠামোর ঘাটতি এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ সমস্যা উৎপাদন খাতকে পিছিয়ে দিচ্ছে। সেবা খাতও ভালো করছে, তবে রাজনৈতিক অস্থিরতায় এই খাতের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিয়ে সরকারের সমর্থনের দরকার পড়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, সরকারের প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ঠিক রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। আর পর্যাপ্ত অবকাঠামো, দক্ষ মানবসম্পদ এবং বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশ হচ্ছে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মূল বিষয়।
সবশেষে এমসিসিআই চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) জন্য প্রাক্কলনও করেছে। তারা মনে করছে, এই তিন মাসে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্তই থাকবে। ফলে রপ্তানি, আমদানি এবং প্রবাসী-আয় আরও বাড়বে। তবে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) আমদানির অর্থ পরিশোধ করায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কিছুটা কমতে পারে। অবশ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়তে পারে।

তথ্যসূত্র : প্রথমআলো

About Author

Profile Picture

Golden Bangladesh

Golden Bangladesh is a point of access to information.We present information from diverse sources in a unified way. It is the leading web portal, e-Directory and business guide in Bangladesh.

Leave a Comment