অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে পিছিয়ে বাংলাদেশ

Picture

অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও সুসমন্বিত উন্নয়নে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে পেছনের সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ। সার্বিক উন্নয়নে বড় বাধা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে দুর্নীতি, আমলাতন্ত্রিক জটিলতা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার মতো সমস্যাগুলো। তাই এসব সমস্যা উত্তরণের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশকে।

সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বিশ্বের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে প্রথমবারের মতো ইনক্লুসিভ গ্রোথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৫ (অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন রিপোর্ট ২০১৫) প্রকাশ করে। এতে ১১২ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চিত্র তুলে আনা হয়। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলা হয়, নিম্নআয়ের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কম্পানিগুলোই ব্যাংকিং খাত ও শেয়ারবাজার থেকে অর্থ তোলার তুলনামূলক ভালো সুবিধা পেয়ে থাকে। এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবেদনে দেশগুলোকে চারটি গ্রুপে উল্লেখ করা হয়। উন্নত দেশ, উচ্চ মধ্যআয়ের দেশ, নিম্ন মধ্যআয়ের দেশ এবং নিম্নআয়ের দেশ। এতে মাথাপিছু আয় হিসেবে বাংলাদেশকে নিম্নআয়ের দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ধরা হয়েছে ৯০৪ ডলার এবং বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচকে অবস্থান ধরা হয়েছে ১৮টি নিম্নআয়ের দেশের মধ্যে ষষ্ঠ।

প্রতিবেদনে একটি দেশের সার্বিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য ১৪০টি নির্দেশক হিসাব করা হয়েছে। এগুলোকে আবার সাতটি খাত ও ১৫টি উপখাতে ভাগ করা হয়েছে। খাতগুলো হচ্ছে-শিক্ষা এবং দক্ষতা, কর্মসংস্থান এবং শ্রমিক ক্ষতিপূরণ, সম্পদ গঠন ও উদ্যোক্তা তৈরি, প্রকৃত বিনিয়োগের আর্থিক মাধ্যম, দুর্নীতি ও ঘুষ, মৌলিক সেবা ও অবকাঠামো, রাজস্ব বণ্টন। এ সাতটি মৌলিক বিষয়ের মধ্যে প্রায় সবগুলোতেই সর্বনিম্ন ২০টি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে অন্যতম উপখাত ব্যবসা ও বিনিয়োগের আর্থিক মাধ্যমে বাংলাদেশ শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে রয়েছে।

এ ছাড়া নিম্নআয়ের দেশগুলোর মধ্যে শিক্ষা এবং দক্ষতায় বাংলাদেশ ২.৮৮ পয়েন্ট নিয়ে ১১তম, কর্মসংস্থান ও শ্রমিক ক্ষতিপূরণে ৩.৪১ পয়েন্ট নিয়ে ১৬তম, সম্পদ গঠন ও উদ্যোক্তা তৈরিতে ২.৮৮ পয়েন্ট নিয়ে নবম, প্রকৃত বিনিয়োগের আর্থিক মাধ্যমে ৩.২১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণে ৩.৫২ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ, মৌলিক সেবা এবং অবকাঠামো সুবিধায় ৩.০৯ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ এবং সর্বশেষ খাত রাজস্ব বণ্টনে ৩.১৫ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ নিম্নআয়ের দেশগুলো নিয়ে বলা হয়, এ দেশগুলোকে অবশ্যই উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি তৈরিতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশগুলোকে দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্ব দিতে হবে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে। এ জন্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা এবং দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক বিনিয়োগে গুরুত্ব দিতে হবে। বলা হয়, ব্যাংকিং আর্থিক সহায়তা গ্রহণ ও শেয়ারবাজার থেকে অর্থ তোলার সুবিধা বাংলাদেশের কম্পানিগুলোর জন্য সমআয়ের দেশগুলোর চেয়ে অনেক ভালো। যেটি ব্যবসায়িক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে দেশটিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে অনেক খাতেই সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বলা হয়, বাংলাদেশকে লালফিতার দৌরাত্ম্য কমিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন এবং মৌলিক সেবা বাড়াতে হবে এবং বেপরোয়া দুর্নীতি থামাতে হবে। এতে কর্মসংস্থান যেমন বাড়বে, তেমনি সুসমন্বিত অর্থনীতিও গড়ে উঠবে।

বৈশ্বিক দেশগুলো নিয়ে এ প্রতিবেদনে বলা হয়, 'আমাদের ম্যাসেজ স্পষ্ট, বিশ্বের নেতাদের অবশ্যই অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ করতে হবে। যেটি হবে একই সময়ে প্রবৃদ্ধি সহায়ক এবং শ্রমিক সহায়ক। বিশ্বের সব দেশের সামনেই অবারিত সুযোগ রয়েছে, যা তারা এখনো গ্রহণ করতে পারছে না। বলা হয়, মাত্র কিছু দেশ সব নির্দেশকের মধ্যে ভালো করেছে। কিন্তু বেশির ভাগ দেশেরই উন্নতি করার আরো অনেক সুযোগ রয়েছে।'

তথ্যসূত্র : কালেরকন্ঠ

About Author

Profile Picture

Golden Bangladesh

Golden Bangladesh is a point of access to information.We present information from diverse sources in a unified way. It is the leading web portal, e-Directory and business guide in Bangladesh.

Leave a Comment