'ব্যবসায়িক সততায় তাঁরা অনুকরণীয়'

Picture

আইনের মধ্যে থেকে, নিয়মিত রাজস্ব দিয়ে ও ঋণ খেলাপি না হয়ে সততার সঙ্গে ব্যবসা করেও যে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়-এরই দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন স্যামসন এইচ চৌধুরী, এস এইচ কবীর ও আমজাদ খান চৌধুরী। কঠোর পরিশ্রমী এ তিন প্রয়াত ব্যবসায়ী দেশের জন্য গর্ব। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য অনুকরণীয়। এমন অনেক উদ্যোগ তাঁরা নিয়েছেন, যা পরবর্তী সময় রাষ্ট্রীয় আইনে পরিণত হয়েছে। এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য যা ইতিবাচক। স্কুল-কলেজের পাঠ্য বইয়ে এই তিন ব্যক্তিত্বের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

গতকাল শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে চেম্বার ভবনে স্যামসন এইচ চৌধুরী, এস এইচ কবীর এবং আমজাদ খান চৌধুরী-তিন শীর্ষ সফল ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্বকে নিয়ে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ব্যবসায়ী সংগঠন এমসিসিআই এ স্মরণসভার আয়োজন করে। এ সময় তিন শীর্ষ ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্য ও অন্য ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আমজাদ খান চৌধুরী সম্পর্কে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ডিএমডি আহসান খান চৌধুরী বলেন, 'বাবা ছিলেন আমার ব্যবসায়ী জীবনের দৃষ্টান্ত। সততার সঙ্গে যে ব্যবসা করা যায়, তা বাবার কাছে শিখেছি। বাবা তাঁর চাকরিজীবন শেষ করে ব্যবসাজীবন শুরু করে ৪০ বছর পার করার পরও আমি দেখেছি বাবার জীবনীশক্তি। সমস্যা এলেও ভেঙে পড়েননি। নতুন উদ্যমে কাজ করেছেন। নতুনভাবে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন।'

আহসান খান চৌধুরী বলেন, ব্যবসার অন্য দুই পাল সম্পর্কে বলেন, 'আমার বাবা ও তাঁর বন্ধুরা স্যামসন এইচ চৌধুরী এবং এস এইচ কবীর চাচা শুধু নিজেদের ব্যবসা নিয়ে নয়, দেশের অর্থনীতি নিয়েও গভীরভাবে ভাবতেন। সমস্যার সমাধানে পথ বের করতেন।'

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরী সম্পর্কে তাঁর ছেলে দেশের আরেক শীর্ষ ব্যবসায়ী স্কয়ার টয়লেট্রিজের এমডি অঞ্জন চৌধুরী বলেন, 'কঠোর পরিশ্রম বাবাকে দেশের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। বাবা কখনো কাউকে কষ্ট করতে দিতেন না। কারো অর্থ আত্মসাৎ করতে নিষেধ করেছেন। মানুষকে সম্মান দিতে বলেছেন। বলেছেন, শুধু নিজের জন্য নয়, দেশের জন্য ভাববে। দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে। আমরা চেষ্টা করছি তাঁর উপদেশ মেনে চলতে।'

রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিষ্ঠাতা এম এইচ কবীর সম্পর্কে তাঁর ছেলে ব্যবসায়ী সৈয়দ কায়সার কবীর বলেন, ছোট থেকে দেখেছি ব্যবসার এই তিন দিকপাল নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করেছেন শুধু ব্যবসা নিয়ে নয়, কে কার আগে রাজস্ব পরিশোধ করল, কে ব্যাংকের ঋণের টাকা আগে দিয়ে দিল, কে কতজন মানুষকে সেবা করল। এসব ব্যক্তিত্বের জীবনী পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। স্মরণসভায় সিপিডির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এ দেশের অর্থনীতি গতিশীল করতে এই তিন স্থপতি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁরা শুধু দেশের জন্য নয়, এশিয়া অঞ্চলের জন্য নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছেন। সৎ ও মূল্যবোধ নিয়ে যে ব্যবসা করা যায়, তা এই তিন ব্যবসায়ী মৃত্যুর আগে প্রমাণ করে গেছেন। সিএসআর কার্যক্রম তাঁরা শুরু করেছিলেন। তা আজ অনেকেই অনুসরণ করছে।

সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক বলেন, ব্যবসায়ীরা কঠিন ত্যাগ স্বীকার একটি দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখে। দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। কিন্তু দেশ বিনিময়ে তাদের সেভাবে সম্মানিত করে না। ব্যবসায়ীদের সম্মানিত করা উচিত। এমসিসিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি জেনারেল সিকে হায়দার বলেন, এই তিন ব্যবসায়ীর জীবনী মানুষকে জানানো প্রয়োজন।

এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী বলেন, তিন শীর্ষ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে সততা, ধৈর্য, বন্ধুত্ব, পরোপকারী হওয়ায় উৎসাহ পেয়েছি। দেশের পাঠ্য বইয়ে তাঁদের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান, এ কে আজাদ, এমসিসিআইয়ের সভাপতি নাসিম মঞ্জুর ও সাবেক সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান, লায়লা কবীর, আবু হাফিজ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

তথ্যসূত্র : কালেরকন্ঠ

About Author

Profile Picture

Golden Bangladesh

Golden Bangladesh is a point of access to information.We present information from diverse sources in a unified way. It is the leading web portal, e-Directory and business guide in Bangladesh.

Leave a Comment