Paripatra-2 2014-2015

 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
রাজস্ব ভবন
সেগুনবাগিচা, ঢাকা-১০০০।

নথি নং- ০৮.০১.০০০০.০৩০.০৩.০০৮.২০১৪ তারিখঃ ২২/০৭/২০১৪ খ্রিঃ।
পরিপত্র নং- ২ (আয়কর)/২০১৪

বিষয়ঃ ব্যাংক হিসাবে বাড়ী ভাড়া জমা সংক্রান্তঃ

আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা ৩৫ এবং বিধি ৮এ অনুসারে বাড়ী ভাড়া ব্যাংক হিসাবে জমা করার বিধান করা হয়েছে। এক বা একাধিক ভাড়াটিয়ার নিকট থেকে বাড়ী ভাড়া বাবদ মাসিক সর্বমোট ২৫ হাজার টাকার বেশী প্রাপ্ত হলেই বাড়ীর মালিককে ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করতে হবে এবং ঐ হিসাবে প্রাপ্ত ভাড়া জমা করতে হবে।

বাড়ীর মালিক (ব্যক্তি, ফার্ম, কোম্পানী বা অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠান) কর্তৃক এ বিধান পরিপালন করা না হলে গৃহ সম্পত্তি বাবদ অর্জিত আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের ৫০% অথবা ন্যূন্তম ৫,০০০ টাকা (যেটি বেশী) হারে বাধ্যতামূলকভাবে জরিমানা আরোপিত হবে। এছাড়া, কোন করদাতার ব্যবসা বা পেশা আয় থাকলে তাঁকে ব্যবসা/পেশা সংশ্লিষ্ট বাড়ী, অফিস বা দোকান ভাড়া বাবদ প্রদেয় অর্থ অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায়, প্রদত্ত ভাড়া তার ব্যবসায়িক খরচ হিসেবে বিবেচিত হবে না বরং পরিশোধিত ভাড়া আয় হিসেবে বিবেচনাপূর্বক তার উপর আয়কর পরিশোধ করতে হবে।

বাড়ী ভাড়া পরিশোধের পদ্ধতি (ধারা ৩৫ ও বিধি ৮এ)ঃ

আয়কর অধ্যাদেশে হিসাব রক্ষণের পদ্ধতি বিষয়ক ধারা ৩৫ সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত বিধান অনুযায়ী কোন ব্যবসা বা পেশার জন্য বা অন্য কোন উৎসের আয়ের জন্য বা যে কোন শ্রেণীর করদাতা বা আয়ের জন্য হিসাব রক্ষণের পদ্ধতি নির্ধারণ করা যাবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সাধারণ বা বিশেষ আদেশ জারী করবে। উক্ত আদেশের মাধ্যমে হিসাব বা দলিলাদি কিভাবে বা কোন্‌ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হবে বা বাণিজ্যিক লেনদেনের পদ্ধতি বা পরিশোধের পদ্ধতি কি হবে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নির্ধারণ করবে।

এ বিধানের সাথে সংগতি রেখে বাড়ী ভাড়া পরিশোধের পদ্ধতি নির্ধারণ করার জন্য আয়কর বিধিমালা, ১৯৮৪ এ বিধি ৮এ নামে নতুন একটি বিধি সংযোজন করা হয়েছে। উক্ত বিধি অনুযায়ী কিভাবে বাড়ী ভাড়া পরিশোধিত হবে বা ব্যাংক হিসাবে জমা করা হবে তা নির্ধারিত হয়েছে। উক্ত বিধানের আলোকে বাড়ীর মালিক ও ভাড়াটিয়াগণের করণীয়সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

ক) বাণিজ্যিক বা আবাসিক যে কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত গৃহ সম্পত্তির মালিক বা ভোগ দখলে থাকা করদাতা কর্তৃক এক বা একাধিক ভাড়াটিয়ার নিকট থেকে বাড়ী ভাড়া বাবদ মাসিক ২৫ হাজার টাকার বেশী (ফার্নিচার, ফিক্সচার ও ফিটিং ভাড়াসহ) প্রাপ্ত হলে বাড়ী ভাড়া জমা দেয়ার জন্য যে কোন  তফসিলি ব্যাংকে হিসাব পরিচালনা করতে হবে;

খ) উক্ত ব্যাংক হিসাবে অন্যান্য অর্জিত আয়সহ বাড়ী ভাড়া বা অগ্রীম ভাড়া হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ জমা করা যাবে;

গ) এক বা একাধিক ভাড়াটিয়ার নিকট থেকে মাসিক ২৫ হাজার টাকার বেশী বাড়ী ভাড়া প্রাপ্ত হলে হিসাবের সুবিধার জন্য করদাতা একটি পৃথক রেজিষ্টার সংরক্ষণ করতে পারেন;
ঘ) উক্ত রেজিষ্টারে সংশ্লিষ্ট ভাড়াটিয়াদের তথ্যাদি তথা নাম, ঠিকানা, ভাড়া প্রদানের তারিখ, ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ইত্যাদি উল্লেখ করা এবং প্রয়োজনে ভাড়াটিয়াদের অন্যান্য তথ্যাদি সন্নিবেশ করতে হবে;

ঙ) করদাতা কর্তৃক বাড়ী ভাড়া জমা করা সংক্রান্ত ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারকে অবহিত করতে হবে এবং আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় রিটার্নের সাথে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত ব্যাংক হিসাব বিবরণীর কপি অবশ্যই দাখিল করতে হবে।

চ) যৌথ মালিকানায় একাধিক ব্যক্তি বাড়ির মালিক হলে, যে সকল মালিকের ভাড়ার অংশ মাসিক ২৫ হাজার টাকা অতিক্রম করবে, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাংক হিসাব খুলে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত লেনদেন করতে হবে;

ছ) ভাড়ার পরিমাণ নির্বিশেষে ভাড়াটিয়াগণ ক্রস চেকের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করবেন অথবা বাড়ির মালিকের ব্যাংক হিসাবে ভাড়ার টাকা নগদ জমা করতে পারবেন। কোন ভাড়াটিয়া বাড়ীর মালিককে নগদে ভাড়া পরিশোধ করলে, বাড়ির মালিক তাঁর ব্যাংক হিসাবে উক্ত ভাড়া জমা করবেন;

জ) কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে পৃথক ব্যাংক একাউন্ট খুলে ভাড়ার লেনদেন করতে পারেন; এবং
ঝ) কোন বাড়ীর মালিক দেশে অবস্থান না করলে এবং তাঁর মালিকানাধীন বাড়ী রক্ষণাবেক্ষন ও ভাড়া আদায়ের জন্য তিনি যদি অন্য কাউকে Power of Attorney প্রদান করেন, তবে সেক্ষেত্রে Power of Attorney প্রাপ্ত ব্যক্তিকে উক্ত ভাড়া জমা করার জন্য ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করতে হবে।

গৃহ সম্পত্তির ভাড়া নির্ধারণঃ

গৃহ সম্পত্তি হতে ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারণ সংক্রান্ত আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ২(৩) এবং ২৪ ধারায় অর্থ আইন-২০১৪ এর মাধ্যমে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে কোন করদাতা প্রকৃত ভাড়ার তুলনায় কম আয় ব্যাংকে জমা করলে, অথবা প্রাপ্ত ভাড়া নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে মোটেই জমা না করলে প্রচলিত নিয়মে উপকর কমিশনার আয়কর অধ্যাদেশের ২(৩) এবং ২৪ ধারা প্রয়োগ করে গৃহ সম্পত্তি খাতে আয় নির্ধারণ করতে পারবেন। ব্যাংক হিসাবে ভাড়া জমা করা সংক্রান্ত বিধানটি নিম্নে কয়েকটি উদাহরণ সহকারে স্পষ্ট করা হলোঃ

(১) জনাব অমিত হাসান ধানমন্ডিতে পৈত্রিক বাড়ীতে বসবাস করেন। ১০ টি ফ্ল্যাট বিশিষ্ট ৬-তলা বাড়ীর বর্তমান মালিক তাঁর মরহুম পিতার চারজন উত্তরাধিকার। আইন অনুযায়ী তিনি, তাঁর মা এবং দুই বোন এই বাড়ীর মালিক। জনাব অমিত ৪টি ফ্ল্যাটের মালিক হিসেবে নিজে একটিতে বসবাস করেন এবং অন্য ৩টি ফ্ল্যাট প্রতিটি ২৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে আয় প্রাপ্ত হন। অন্যদিকে, তাঁর মা ২টি ফ্ল্যাটের মালিক কিন্তুছেলের সাথে বসবাস করেন এবং ফ্ল্যাট দুটিও মাসিক ২৫ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়ে তিনি আয় প্রাপ্ত হন। দুই বোনের রয়েছে ৪টি ফ্ল্যাটের মালিকানা। এছাড়া, জনাব অমিত গুলশানে ডেভেলপার কোম্পানী থেকে একটি ফ্ল্যাটের দখল বুঝে পেয়েছেন কিন্তু এখনো দলিল সম্পন্ন হয়নি। উক্ত ফ্ল্যাটটিও তিনি মাসিক ৪০ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছেন। বসুন্ধরা শপিং মলে জনাব অমিতের রয়েছে ২টি দোকান। একটিতে নিজে ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং অন্যটি ভাড়া বাবদ মাসিক ১০ হাজার টাকা প্রাপ্ত হন।
এক্ষেত্রে, জনাব অমিত নিম্নরূপ ভাড়া প্রাপ্ত হচ্ছেনঃ

ক্রমিক ভাড়ার বিবরণ মাসিক ভাড়ার পরিমাণ ইউনিটের সংখ্যা সর্বমোট ভাড়া
১। ধানমন্ডিতে ৩টি ফ্ল্যাটের ভাড়া ২৫,০০০/- ৭৫,০০০/-
২। গুলশানে ১টি ফ্ল্যাটের ভাড়া ৪০,০০০/- ৪০,০০০/-
৩। বসুন্ধরায় দোকান ভাড়া ১০,০০০/- ১০,০০০/-
    সর্বমোট  ১২৫,০০০/-

এক্ষেত্রে, জনাব অমিত যেহেতু মাসিক ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা প্রাপ্ত হয়েছেন, সেহেতু তাঁর জন্য এ বিধান অবশ্যই পালনীয়। জনাব অমিতকে জুলাই, ২০১৪ থেকে যে কোন তফসিলি ব্যাংকে হিসাব পরিচালনা করতে হবে এবং বাড়ী ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত চেক/নগদ অর্থ জমা করতে হবে। এছাড়া, হিসাব রক্ষনের সুবিধার্থে তিনি ভাড়াটিয়াগণের তথ্যাদি যেমন নাম, ঠিকানা, ভাড়া গ্রহণের তারিখ, ভাড়ার পরিমাণ, অগ্রীম ভাড়া গ্রহণ করা হলে গৃহীত অগ্রীমের পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য সন্নিবেশ করার জন্য একটি পৃথক রেজিষ্টার সংরক্ষণ করতে পারেন। জনাব অমিতের পরিচালিত ব্যাংক হিসাব সংগ্রহপূর্বক ভাড়াটিয়াগণ নিজেরাই ভাড়ার টাকা ক্রস চেকের মাধ্যমে বা নগদে জমা করতে পারবেন অথবা নগদ টাকা জনাব অমিতের নিকট জমা দিবেন এবং তিনি এ টাকা তাঁর ব্যাংক হিসাবে জমা করবেন।

(২) জনাব সাগর ঢাকার আরামবাগে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছেন। প্রতি কক্ষে ৪ জন করে ভাড়াটিয়া থাকেন। প্রতি ভাড়াটিয়া ২ হাজার ৫ শত টাকা ভাড়া পরিশোধ করেন। একই সাথে জনাব সাগর কমলাপুরের পাশে অবস্থিত এবং তাঁর দখলে থাকা ৪টি ছোট ছোট ঘর ভাড়া দিয়ে প্রতিটি ঘর থেকে মাসিক ৩ হাজার টাকা ভাড়া প্রাপ্ত হন। এক্ষেত্রে জনাব সাগর নিম্নরূপ ভাড়া প্রাপ্ত হচ্ছেনঃ

ক্রমিক ভাড়ার বিবরণ প্রতি কক্ষের ভাড়া ইউনিটের সংখ্যা সর্বমোট টাকা
১।  আরামবাগে ৪টি রম্নমের ভাড়া ২,৫০০x৪=১০,০০০/- ৪০,০০০/-
২। কমলাপুরে অবস্থিত ঘর ভাড়া ৩,০০০/- ১২,০০০/-
    সর্বমোট ৫২,০০০/-

জনাব সাগর প্রত্যেক ভাড়াটিয়ার নিকট থেকে ২৫ হাজার টাকার কম ভাড়া প্রাপ্ত হলেও যেহেতু তাঁর সর্বমোট মাসিক ভাড়া প্রাপ্তির পরিমাণ ৫২ হাজার টাকা অর্থাৎ ২৫ হাজার টাকার বেশী, সেহেতু তাঁকেও ব্যাংক হিসাবে এ ভাড়া জমা দেয়া সংক্রান্ত বিধান পরিপালন করতে হবে।

(৩) অগ্রণী ব্যাংক লি: এর ঢাকাস’ মৌচাক শাখা একটি ভাড়া বাড়ীতে অবস্থিত। উক্ত ভাড়া বাড়ীর জন্য মাসিক ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। এই বাড়ীর মালিক মরহুম জব্বারের উত্তরাধীকারী হিসেবে ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। মুসলিম শরিয়া আইনে যেহেতু ১ ছেলে ১০ হাজার টাকা এবং ১ মেয়ে ৫ হাজার টাকা ভাড়া প্রাপ্ত হন, সেহেতু মোট মাসিক ভাড়া ২৫ হাজার টাকার বেশী হলেও একজন ব্যক্তির প্রাপ্ত ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত সীমার নীচে। এ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বাড়ী ভাড়া ব্যাংক হিসাবে জমা করা বাধ্যতামূলক নয়।

তবে, যদি মরহুম জব্বারের একজন ছেলে উক্ত বাড়ী ব্যতীত অন্যান্য বাড়ী ভাড়া বাবদ আরো ১৬ হাজার টাকা প্রাপ্ত হয়, তাহলে যৌথ মালিকানাধীন বাড়ীর তাঁর অংশের ব্যাংকের ভাড়া বাবদ ১০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য বাড়ীর ১৬ হাজার টাকা সর্বমোট মাসিক ২৬ হাজার টাকার জন্য তাঁকে ব্যাংক হিসাব পরিচালনাসহ অন্যান্য বিধান পরিপালন করতে হবে।

(৪) জনাব আহসান দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ আয়কর পরিশোধ করে আসছেন। তাঁর আয়ের অন্যতম উৎস বাড়ী ভাড়া। ২০১৩-২০১৪ করবর্ষে একটি ফ্লাটের ভাড়া বাবদ তিনি ৩০ হাজার টাকা প্রদর্শন করেছিলেন। নতুন এ বিধান প্রবর্তনের প্রেক্ষিতে জনাব আহসান ভাড়াটিয়ার সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে ভাড়া বাবদ ২০ হাজার টাকা নগদে গ্রহণ করেছেন এবং চেকের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন। ২০১৫-২০১৬ করবর্ষে জনাব আহসান যদি তাঁর বাড়ী ভাড়া বাবদ মাসিক ১০ হাজার টাকা প্রদর্শন করে ব্যাংক বিবরণীসহ আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন এবং কর নির্ধারণ পর্যায়ে দেখা যায় যে, ২০১৩-২০১৪ করবর্ষে ৩০ হাজার টাকা ভাড়া আয় প্রদর্শন করা হয়েছিল, তবে সে ক্ষেত্রে উপ কর কমিশনার আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ২(৩) ধারার ক্ষমতাবলে বাড়ী ভাড়া বাবদ মাসিক ৩০ হাজার টাকা অথবা যুক্তিসংগত পরিমাণ ভাড়া প্রাপ্তি প্রাক্কলন করবেন এবং যথাযথভাবে খরচ বিয়োজনপূর্বক গৃহ সম্পত্তি খাতে আয় নিরূপন করবেন।

প্রদেয় আয়করের পাশাপাশি ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভাড়া জমা না দেওয়ার কারণে বা আংশিক ভাড়া জমা করার কারণে ১২৩(২) ধারার বিধান অনুযায়ী বাড়ী ভাড়ার উপর প্রদেয় করের ৫০% অথবা কমপক্ষে ৫,০০০ টাকা (যেটি বেশী) জরিমানা হিসেবে আরোপ করবেন।

উলেস্নখ্য, বাড়ী ভাড়ার আয় গোপনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে যদি তথ্য-প্রমাণাদি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোন বাড়ীর মালিক মাসিক ২৫ হাজার টাকার অধিক বাড়ী ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত হলেও তার আয়কর নথিতে উক্ত অর্থের কম প্রাপ্তি হিসেবে প্রদর্শন করেছেন বা কোন আয় প্রদর্শন করেন নি, তাহলে তাঁর সংশ্লিষ্ট করবর্ষের কর মামলা ৯৩ ধারায় উন্মোচন/পূণ:উন্মোচন করে কর নির্ধারণ করা হবে এবং কর ফাঁকির জন্য ১২৮ ধারার জরিমানার পাশাপাশি এই বিধান লংঘনের জন্য ১২৩(২) ধারার নির্ধারিত জরিমানাও আরোপিত হবে।

(৫) জনাব হোসেন দশটি ফ্ল্যাট বিশিষ্ট একটি বাড়ির মালিক ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র এবং দুই কন্যা রেখে যান। বাড়িটির পাঁচটি ফ্ল্যাটে বাড়ির মালিকগণ নিজেরা বসবাস করেন। অন্য পাঁচটি ফ্ল্যাট প্রত্যেকটি মাসিক ২০ হাজার টাকায় ভাড়া প্রদান করেন।

এক্ষেত্রে প্রচলিত আইন অনুসারে বাড়ির মালিকগণের কারো অংশেই মাসিক ভাড়া ২৫ হাজার টাকা অতিক্রম না করায় ব্যাংক হিসাব খোলা বাধ্যতামূলক নয়।

(৬) জনাব জাকির হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী একজন অনিবাসী বাংলাদেশী, তিনি ঢাকাস’ মিরপুরে একটি ৫ তলা দালানের মালিক। উক্ত বাড়ী রক্ষণাবেক্ষণ এবং ভাড়া আদায়ের জন্য তিনি তাঁর ভাই জনাব আমির হোসেনকে Power of Attorney প্রদান করেন।

এক্ষেত্রে উক্ত বাড়ী ভাড়া জমা করার জন্য জনাব আমির হোসেনকে একটি ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করে উক্ত ব্যাংক হিসাবে বাড়ী ভাড়ার টাকা জমা করতে হবে। জনাব জাকির হোসেনের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় উক্ত বাড়ী ভাড়া জমা হওয়া সংক্রান্ত জনাব আমির হোসেনের ব্যাংক হিসাবের বিবরণী দাখিল করতে হবে।

ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বাড়ী ভাড়ার টাকা জমা না করলে প্রযোজ্য করের ৫০% অথবা ন্যূনতম ৫,০০০ টাকা  (যেটি বেশী) জরিমানা আরোপঃ

আয়কর আইনের ১২৩ ধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধিত বিধান অনুযায়ী নির্ধারিত হিসাব রক্ষণের পদ্ধতি অনুসরণ না করলে জরিমানা আরোপের বিধান করা হয়েছে। উপ-ধারা (২) অনুযায়ী ব্যক্তি বা কোম্পানী বা যে কোন শ্রেণীর করদাতার গৃহ সম্পত্তি আয় থাকলে এবং সর্বমোট ভাড়া প্রাপ্তির পরিমাণ মাসিক ২৫ হাজার টাকার অধিক হলে ঐ করদাতাকে বিধি ৮এ অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংক হিসাবে বাড়ী ভাড়া জমা করতে হবে। এ শর্ত পরিপালন করা না হলে গৃহ সম্পত্তি খাতের আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের ৫০% অথবা ন্যূনতম ৫,০০০ টাকা (যেটি বেশী) আবশ্যিকভাবে জরিমানা আরোপিত হবে। তবে জরিমানা আরোপের পূর্বে করদাতাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে ১৩০ ধারার নোটিশ প্রদান করা হবে। জরিমানা আরোপের পদ্ধতি নিম্নরূপঃ

করদাতা জনাব আনিস বাড়ী ভাড়া জমা দেয়ার জন্য কোন ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করেননি এবং প্রাপ্ত বাড়ী ভাড়া তাঁর ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয়নি। ২০১৫-২০১৬ করবর্ষে আয়কর রিটার্নে তিনি নিম্নরূপ আয় প্রদর্শন করেছেন:

ব্যবসা খাতে আয় ৫,০০,০০০/-
গৃহসম্পত্তি খাতে আয় ৬,০০,০০০/-
অন্যান্য উৎসের আয় ৩,৫০,০০০/-
মোট আয় ১৪,৫০,০০০/-

মোট আয়ের উপর আরোপযোগ্য আয়করের পরিমাণ হবে নিম্নরূপ:

মোট আয় ১৪,৫০,০০০/-
করমুক্ত সীমা ২,২০,০০০/
  টা: ১২,৩০,০০০/-
প্রথম সত্মরে করের পরিমান হবে ১০% হারে টা: ৩,০০,০০০/
টা: ৯,৩০,০০০/-
এর উপর ৩০,০০০/-
দ্বিতীয় সত্মরে করের পরিমান হবে ১৫% হারে টা:৪,০০,০০০/-
টা: ৫,৩০,০০০/-
এর উপর  ৬০,০০০/-
     
তৃতীয় সত্মরে করের পরিমান হবে ২০% হারে টা: ৫,০০,০০০/-
টা: ৩০,০০০/-
এর উপর  ১,০০,০০০/-
অবশিষ্ট ৩০,০০০/- টাকার উপর ২৫% হারে করের পরিমাণ হবে ৭,৫০০/-
সর্বমোট প্রদেয় করের পরিমাণ ১,৯৭,৫০০/-
দাবীকৃত বিনিয়োগজনিত রেয়াতের পরিমাণ ধরা যাক শূন্য
নীট প্রদেয় করের পরিমাণ  ১,৯৭,৫০০/-

ব্যাংক হিসাবে বাড়ী ভাড়া জমা না করায় বাড়ী ভাড়ার উপর নিম্নরূপে জরিমানা আরোপিত হবে:

বাড়ী ভাড়ার উপর প্রদেয় আয়কর
=
১,৯৭,৫০০/- X ৬,০০,০০০/-
১৪,৫০,০০০/-
= ৮১,৭২৪/-

বাড়ী ভাড়ার উপর প্রদেয় আয়কর ৮১,৭২৪/- টাকার ৫০%  অথবা ৫,০০০ টাকা, এ দুয়ের মধ্যে যেটি বেশী অর্থাৎ ৪০,৮৬২/- টাকা জরিমানা হিসেবে আরোপিত হবে। ফলে করদাতা জনাব আনিস এর মোট প্রদেয় আয়করের পরিমাণ হবে ১,৯৭,৫০০/- + ৪০,৮৬২/- = ২,৩৮,৩৬২/- টাকা। উলেস্নখ্য, আলোচ্য করদাতার ক্ষেত্রে ৭৩ ধারায় সরল সুদ ও সারচার্জ প্রদেয় হলে তাও আলাদাভাবে নিয়ম অনুযায়ী আরোপিত হবে।

ব্যাংকের মাধ্যমে বাড়ী ভাড়া জমা না করায় ব্যবসা বা পেশা খাতে খরচ অগ্রাহ্যকরণ:

আয়কর আইনের ৩০ ধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধিত বিধান অনুযায়ী ব্যবসা বা পেশা খাতে  আয় রয়েছে এমন যে কোন করদাতার (ব্যক্তি, ফার্ম, কোম্পানী পর্যায়ের করদাতা ইত্যাদি) বাড়ী ভাড়া বাবদ বাড়ীর মালিককে প্রদেয় ভাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাড়ী ভাড়া বাবদ প্রদেয় অর্থ অবশ্যই ক্রস চেক বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় কর নির্ধারণ পর্যায়ে এ খরচ অগ্রাহ্য করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট করদাতার আয় হিসেবে বিবেচনা করে প্রযোজ্য হারে আয়কর আরোপিত হবে। ১ জুলাই, ২০১৪ তারিখের পর পরিশোধিত ভাড়ার ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মিসেস হক এর বিবিধ মালের ব্যবসা থেকে আয় রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি মাসিক ৫ হাজার টাকা হিসেবে বার্ষিক ৬০ হাজার টাকা বাড়ী ভাড়া বাবদ খরচ হিসেবে দাবী করেছেন। নতুন সন্নিবেশিত বিধান অনুযায়ী মিসেস হক যদিও মাসিক ৫ হাজার টাকা হিসেবে বাড়ী ভাড়া বাবদ ব্যয় দাবী করেছেন, যদি তিনি এ ব্যয় ক্রস চেক বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে পরিশোধ না করেন, তাহলে মিসেস হকের দাবীকৃত এ খরচ অগ্রাহ্য হবে এবং বাড়ীভাড়া বাবদ পরিশোধিত অর্থ তাঁর ব্যবসা আয় হিসেবে বিবেচনাপূর্বক প্রযোজ্য হারে আয়কর আরোপিত হবে।

উপরোক্ত বিধানসমূহ ১ জুলাই, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ থেকে প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ ২০১৫-২০১৬ করবর্ষ থেকে কার্যকর হবে। এ বছর অর্থাৎ ২০১৪-১৫ কর বছরের জন্য যে সকল বাড়ীর মালিক রিটার্ন দাখিল করবেন তাঁরা পূর্বের নিয়মেই রিটার্ন দাখিল করবেন।

(মোঃ আবদুর রহমান খান এফসিএমএ)
প্রথম সচিব (কর নীতি)
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ঢাকা।

 

 

About Author

Profile Picture

Mijan Niloy

Leave a Comment