অবশেষে ঘুম ভেঙেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার

অবশেষে ঘুম ভেঙেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার

মাসাধিককাল ধরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কয়েকটি নির্দিষ্ট কোম্পানির টানা মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে যখন তা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে তখন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষ নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিল। বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে এসব নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পুঁজিবাজারের এ দুই অভিভাবক কর্তৃপক্ষ। অবশেষে এ সপ্তাহে দু’টি প্রতিষ্ঠানেরই ঘুম ভেঙেছে। তবে ইতোমধ্যে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। মৌলভিত্তির তলানিতে থাকা এসব শেয়ারের দর গত এক মাসে বেড়েছে দুই থেকে আড়াই শ’ শতাংশ। আর এ সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ এক দিকে এসব শেয়ারে ঢুকে পড়েছেন অন্য দিকে বাজার খেলোয়াড়েরা এসব শেয়ার ছেড়ে বেরিয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন। বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ এবং বাজারসংশ্লিষ্টরা যখন বারবার এসব শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির তদন্ত করার কথা বলেছে, তখন এ দুই কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করলেও এ সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার ডিএসই কর্তৃপক্ষ একটি কোম্পানির লেনদেন স্থগিত করে। এরই মধ্যে কোম্পানিটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারদর ছাড়িয়ে গেছে ৮০০ টাকা। লেনদেন স্থগিত করার দিন কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৮৭৬ টাকা। ডিএসই থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ওই দরে কোম্পানিটির শেয়ারের পিই দাঁড়ায় ৭০০। অথচ একটি কোম্পানির পিই ১০০ অতিক্রম করে ৭০০তে পৌঁছা পর্যন্ত কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এভাবে একের পর এক দুর্বল মৌলভিত্তি ও স্বল্প মূলধনী বেশ কয়েকটি কোম্পানির দর বেড়েছে লাগামহীনভাবে। একইভাবে ডিএসই কর্তৃপক্ষ বুধবার আরো একটি কোম্পানির লেনদেন স্থগিত করে পর দিনই আবার তা ছেড়ে দেয়। লেনদেন স্থগিত করার কারণে প্রথমদিন কোম্পানিটি কিছুটা দর হারালেও পর দিন আবার ডিএসইর শীর্ষ মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় উঠে আসে কোম্পানিটি। সবশেষ সপ্তাহের শেষদিন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কমিশন সভায় সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া এ ধরনের ১২টি কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক তার তদন্ত রিপোর্ট ১৫দিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেয়া এ সিদ্ধান্তকে অনেকে স্বাগত জানালেও অনেকেই আবার এত দেরিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়ার সমালোচনা করেন। তারা মনে করেন, পুঁজিবাজারে কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার অজ্ঞাতে হয় না। অতীতের মতো এখনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার একটি অংশ পুরোপুরোই এ কারসাজির সাথে জড়িত। এ কারণে পরিকল্পিতভাবে বাজারকে কারসাজিকারীদের হাতে তুলে দেয়া হয় এবং যখন সময় হয় তখন এ জাতীয় লোক দেখানো কমিটি ও তদন্তের নামে দায়সারাভাবে তাদের দ্বায়িত্ব পালনের ভূমিকা নেয়। এর আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা চারটি কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। পরে এ ধরনের বেশ কিছু কোম্পানি একই তালিকায় উঠে এলেও এ নিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এমনকি গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় ডিএসই প্রেসিডেন্ট আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের বলেন, টাকা থাকলে যে কেউ যেকোনো দামে শেয়ার কিনতে পারেন। ডিএসই কোনোভাবেই তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। তিনি আরো বলেন, শুধু লিখিত আবেদন পেলেই ডিএসই এ ব্যাপারে তদন্ত করে দেখতে পারে। তবে এ বক্তব্যের পর দিনই ডিএসই কর্তৃপক্ষ এ তালিকায় থাকা একটি কোম্পানির লেনদেন স্থগিত করে। পর দিন আরো একটি। আর সপ্তাহের শেষদিন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে ডিএসইকে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়ার সিদ্ধান্ত। তবে এসব কিছুই এত দেরিতে হয়েছে যখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে এসব শেয়ারের দরপতন ঘটবে এবং তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারী, যারা বাজারের মন্দায় এসব শেয়ারের টানা মূল্যবৃদ্ধি দেখে তা থেকে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সপ্তাহের পুরোটাই কেটেছে মন্দায়। সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবসে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও পর দিন আবারো এ প্রচেষ্টা হোঁছট খায়। সূচকের অবনতির পাশাপাশি সপ্তাহের শেষদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন নেমে আসে গত দেড় মাসের সর্বনি¤েœ। ফলে আগের সপ্তাহ অপেক্ষা বড় ধরনের অবনতি ঘটে দেশের শীর্ষ পুঁজিবাজারটির লেনদেনে। আগের সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেন ছিল দুই হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। এ সপ্তাহে তা নেমে আসে দুই হাজার ৩২ কোটি টাকায়, যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা ২৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম। অনুরূপভাবে ডিএসইর গড় লেনদেন ৫৭৬ কোটি টাকা থেকে নেমে আসে ৪০৬ কোটি টাকায়। সপ্তাহব্যাপী মন্দায় অবনতি ঘটেছে ডিএসইর সূচকের। ডিএসইর প্রধান সূচকটি এ সময় হ্রাস পায় ৮৪ দশমিক ৩২ পয়েন্ট। চার হাজার ৯৭ দশমিক ৭১ পয়েন্ট থেকে সপ্তাহের লেনদেন শুরু করলেও সপ্তাহ শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি চার হাজার ১৩ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে স্থির হয়। একইভাবে ডিএসই-৩০ সূচকটি ১৫১২ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করে ১৪৬৪ পয়েন্টে এসে তা শেষ করে। এভাবে সূচকটির ৪৮ পয়েন্ট অবনতি ঘটে।

dailynayadiganta: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩

About Author

Profile Picture

Golden Bangladesh

Golden Bangladesh is a point of access to information.We present information from diverse sources in a unified way. It is the leading web portal, e-Directory and business guide in Bangladesh.

Leave a Comment