পুঁজিবাজারে দেড় মাসের সর্বনিম্ন লেনদেন

পুঁজিবাজারে দেড় মাসের সর্বনিম্ন লেনদেন

এ সপ্তাহের বেশি সময় সূচকের টানা অবনতির পর এবার লেনদেনেও বড় ধরনের অবনতি ঘটেছে দেশের দুই পুঁজিবাজারে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন নেমে আসে ৩২৪ কোটি টাকায়, যা এ বাজারে দেড় মাসের সর্বনিম্ন লেনদেন। গত ১২ আগস্টের পর আর এ পর্যায়ে নামেনি দেশের প্রধান পুঁজিবাজারটির লেনদেন। অপর দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ২৫ কোটি টাকা লেনদেন সম্পন্ন হয় গতকাল। একদিন আগেও বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪০ কোটি টাকার বেশি। এ দিকে দুই পুঁজিবাজারে মূল্যবৃদ্ধির অস্বাভাবিকতা গতকাল বড় ধরনের ধাক্কা খায়। মঙ্গলবার উভয় পুঁজিবাজারে চিটাগাং ভেজিটেবল অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালসের লেনদেন স্থগিতের পর গতকাল লেনদেনের মাঝপথে রহিমা ফুডের লেনদেন স্থগিত করে পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষ। এর ফলে এ ধরনের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই গতকাল বড় ধরনের দরপতনের শিকার হয়। লেনদেনের বড় একটি সময় বেশির ভাগ কোম্পানিই ক্রেতা পায়নি। মঙ্গলবার পুঁজিবাজারগুলোর নেয়া চিটাগাং ভেজিটেবলের লেনদেন স্থগিতের সিদ্ধান্তে এ তালিকায় থাকা কিছু কিছু কোম্পানি দর হারালেও কয়েকটি কোম্পানি এ দিনও শীর্ষ মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় উঠে আসে। এ দিন ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল রহিমা ফুড। গতকালও লেনদেন শুরুর সাথে সাথে কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি শুরু হলে বাজার কর্তৃপক্ষ এটিরও লেনদেন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়। আর ডিএসইর এ সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ে অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারদরেও। বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষের নেয়া সিদ্ধান্তের প্রভাব ছিল দিনের লেনদেনে। বিগত বেশ কিছু দিন থেকে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছিল দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব কোম্পানি উঠে আসছিল দুই পুঁজিবাজারের লেনদেনের শীর্ষে। গতকালও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের শীর্ষ স্থানটি দখলে নেয় এ তালিকায় থাকা কোম্পানি লিগেসি ফুটওয়্যার। আর এটাই সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারের লেনদেন বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করেন তারা। কিন্তু গতকাল এ ধরনের কোম্পানির বেশির ভাগ বড় ধরনের দরপতনের শিকার হলে সতর্ক হয়ে ওঠেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে কমে যায় উভয় বাজারের লেনদেন। বিনিয়োগকারীরা বাজারগুলোতে লেনদেনের অবনতি ঘটলেও পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষের নেয়া পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে তারা মনে করেন এটা অনেক আগেই করা উচিত ছিল। কারণ ইতোমধ্যে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করে বসে আছেন অনেক ুদ্র বিনিয়োগকারী। শেষ মুহূর্তে এরাই লোকসানের শিকার হবেন। তারপরও পুঁজিবাজারের স্বার্থে এমন পদক্ষেপ যথাযথ বলে মনে করেন তারা। কারণ মৌলভিত্তির দিক থেকে প্রচণ্ড দুর্বল এসব কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি সে দিকে ঘুরিয়ে নিতে সক্ষম হলে ভারসাম্য হারায় বাজার। আর এতে বাজারে সৃষ্টি হয় অস্থিরতা। মার খায় ভালো কোম্পানির শেয়ার। এর মাধ্যমে লোকসান গুনতে হয় বাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। ডিএসইর নেয়া পদক্ষেপ অব্যাহত থাকলে তা বাজার খেলোয়াড়দের এ প্রবণতা সাময়িকভাবে হলেও কমবে বলে মনে করেন তারা। গতকাল সকালেও বরাবরের মতো ঊর্ধ্বমুখীই ছিল দুই বাজার। অন্যান্য দিনের মতো প্রথম আধা ঘণ্টা পরই বিক্রয় চাপে পড়ে বাজারগুলো। এ সময় ডিএসই কর্তৃপক্ষ রহিমা ফুডের লেনদেন স্থগিত করে ডিএসই ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করে। এর পরই দর হারাতে শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানি, বিশেষ করে দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো। এভাবে শুরু হয় সূচকের পতন। সকালে ডিএসইএক্স সূচকের চার হাজার ৩০ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করে প্রথম আধা ঘণ্টায় ৪ হাজার ৫২ পয়েন্টে পৌঁছে যায় সূচকটি। কিন্তু লেনদেনের এ পর্যায়ে বিক্রয়চাপ শুরু হলে নিম্নমুখী হয় সূচকটি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সূচকটি নেমে আসে ৩ হাজার ৯৯৮ পয়েন্টে। এভাবে এক মাসেরও বেশি সময় পর ডিএসইর প্রধান সূচকটি নেমে আসে ৪ হাজার পয়েন্টের নিচে। এ পর্যায়ে ডিএসই সূচকের ৩১ পয়েন্টে বেশি অবনতি ঘটে। তবে দিনের শেষ দিকে সূচক আবার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ৪ হাজার ৫ পয়েন্টে এসে লেনদেন শেষ করে ডিএসই। সিএমসি কামালকে পেছনে ফেলে লেনদেনে গতকাল ডিএসইর শীর্ষে উঠে আসে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস। ১৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় ৭ লাখ ৯৪ হাজার শেয়ার বেচাকেনা হয় কোম্পানিটির। ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা লেনদেন করে সিএমসি কামাল ছিল লেনদেনে দ্বিতীয়। ডিএসইর শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় গতকাল আরো ছিল তাল্লু স্পিনিং, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস, যমুনা অয়েল, বঙ্গজ লিমিটেড, আরএন স্পিনিং, গ্রামীণফোন, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। দিনের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে বীমা খাতের পিপলস ইন্স্যুরেন্সের। ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ দাম বাড়ে কোম্পানিটির। এ ছাড়া রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স ৬ দশমিক ৩৮, বিএটিবিসি ৫ দশমিক ৫৯, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ৫ দশমিক ২৮ ও লিব্রা ইনফিউশনের ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। অপর দিকে দিনের সর্বোচ্চ দরপতন ঘটে মডার্ন ডাইংয়ের। ১০ শতাংশ দর হারায় টেক্সটাইল খাতের কোম্পানিটি। এ ছাড়া বিডি অটোকার ৯ দশমিক ৯৬, দেশ গার্মেন্টস ৯ দশমিক ৯৫, ইনটেক অনলাইন ৯ দশমিক ৯৫, হাক্কানি পেপার অ্যান্ড পাল্প ৯ দশমিক ৮৮, লিগেসি ফুটওয়্যার ৯ দশমিক ৮৩, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক ৯ দশমিক ৮১, আনোয়ার গ্যালভেনাইজিং ৯ দশমিক ৯১, আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ৯ দশমিক ৬৬ ও জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ দর হারায়। উল্লিখিত কোম্পানিগুলো দিনের একটি বড় অংশ ক্রেতাশূন্য ছিল।

About Author

Profile Picture

Golden Bangladesh

Golden Bangladesh is a point of access to information.We present information from diverse sources in a unified way. It is the leading web portal, e-Directory and business guide in Bangladesh.

Leave a Comment