আয়কর আইনে কি ধরনের আয় হিসেবে আনতে হবে অর্থাৎ আয়ের খাতসমূহ : গৃহ সম্পত্তি হতে আয়

আয়কর অধ্যাদেশের ধারা-২০ মোতাবেক আয়কর ধার্য্যরে জন্য এবং মোট আয় নির্ণয়ের জন্য সকল আয়কে নিম্নেবর্ণিত খাতে বিভক্ত করে হিসাবে করতে হবে, যথাঃ

(১) বেতন

(২) নিরাপত্তা জামানতের উপর সুদ (আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ২২ ধারা)ঃ

(৩) গৃহ সম্পত্তির আয় (আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ২৪ ও ২৫ ধারা অনুযায়ী)ঃ

কোন করদাতা তার বাড়ী আবাসিক বা বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ভাড়া দিলে, সেই আয় রিটার্ণের গৃহ সম্পত্তির আয়ের ঘরে দেখাবেন। যারা আট পাতার ফরম পূরণ করবেন (আইটি-১১গ) সেই ফরমের সাথে একটি তফসিল (তফসিল-২) দেয়া আছে। আর যারা তিন পাতার ফরম (ITUMA) ব্যবহার করবেন তারা আলাদা কাগজে দেখাবেন নতুন ফরমে Part-3-এ 52 নং Colum-এ Schedule-24B সিলেক্ট করতে হবে এবং উক্ত ঝপযবফঁষব-এ বাড়ী ভাড়া সংক্রান্ত তথ্যগুলো ইনপুট দিতে হবে। 

তফসিল -২ (গৃহ সম্পত্তির আয়)

গৃহ সম্পত্তির
অবস্থান ও বর্ণনা
বিবরণ টাকা টাকা
বাড়ীর অবস্থান
কত তলা উল্লেখ
 করতে হবে
১। ভাড়া বাবদ বার্ষিক আয়।
গৃহ সম্পত্তি ভাড়া দেয়া হলে ১২ মাসের ভাড়া দেখাতে হবে। যদি এক বা একাধিক মাস
বাড়ী খালি থাকে সেক্ষেত্রেও ১২ মাসের ভাড়া দেখাতে হবে। তবে খালি থাকা মাসের
ভাড়া নীচের আরেকটি ঘরে খরচ হিসাবে দাবী করা যাবে।
  ****
 

২। দাবীকৃত ব্যয়সমূহঃ

মেরামত,আদায়, ইত্যাদিঃ
(ক) আবাসিক ব্যবহারের জন্য ভাড়া দেয়া হলে বার্ষিক ভাড়ার উপর ২৫% মেরামত আদায় ইত্যাদি খরচ অনুমোদন যোগ্য।
(খ) বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ভাড়া দেয়া হলে বার্ষিক ভাড়ার উপর ৩০% খরচ মেরামত , আদায়, ইত্যাদি খরচ অনুমোদনযোগ্য।
এই খরচের জন্য কোন প্রমাণ দাখিলের প্রয়োজন নেই।

****  
  পৌর কর/ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর / স্থানীয় কর ****  
  ভূমি রাজস্ব ****  
  ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত ঋণের উপর সুদ/ বন্ধকী/ মূলধনী চার্জঃ
সংশ্লিষ্ট গৃহ সম্পত্তি নিমার্ণ বা পুনঃ নির্মাণের জন্য ঋণ গ্রহণ করা হলে উক্ত ঋণের সুদ
****  
  বীমা কিস্তি: সংশ্লিষ্ট গৃহ সম্পত্তির বীমা করা হলে ****  
  গৃহ সম্পত্তি খালি থাকার কারণে দাবিকৃত রেয়াত ****  
  অন্যান্য , যদি থাকে ****  
  মোট =   ****
  ৩। নীট আয়ঃ (ক্রমিক ১ হতে ২ এর বিয়োগফল)   ****

(i)     বেতনভুক্ত করদাতাগণ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী বা পেশাজীবি করদাতাগণ  আইটি-১১গ এর পরিবর্তে যথাক্রমে
আইটি-১১ঙ ও আইটি-১১চ ব্যবহার করলে এরূপ তফসিল সংযোজনের প্রয়োজন নেই। তবে গৃহ সম্পত্তি খাতে আয় নিরূপণ করে একটি পৃথক বিবরণী আইটি-১১ঙ বা আইটি-১১চ এর সাথে সংযুক্ত করা যেতে পারে নতুন ফরমে Part-3-এ 52 নং Colum-এ Schedule-24B সিলেক্ট করতে হবে এবং উক্ত Schedule-এ বাড়ী ভাড়া সংক্রান্ত তথ্যগুলো ইনপুট দিতে হবে।
(ii)   এস,আর,ও নং ২১৬-আইন/আয়কর/২০১৪, তারিখঃ ১৮ আগষ্ট, ২০১৪ এর মাধ্যমে বিধি ৮এ সংযোজন করে
আয়কর অধ্যাদেশে হিসাব রক্ষণের পদ্ধতি বিষয়ক ধারা ৩৫ সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে এক বা একাধিক ভাড়াটিয়ার নিকট থেকে বাড়ী ভাড়া বাবদ মাসিক সর্বমোট ২৫ হাজার টাকার বেশী প্রাপ্ত হলেই বাড়ীর মালিককে ব্যাংক হিসাবে প্রাপ্ত ভাড়া জমা করতে হবে। বাড়ীর মালিক (ব্যক্তি, ফার্ম, কোম্পানী বা অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠান) কর্তৃক এ বিধান পরিপালন করা না হলে গৃহ সম্পত্তি বাবদ অর্জিত আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের ৫০% অথবা ন্যূনতম ৫,০০০ টাকা (যেটি বেশি) হারে বাধ্যতামূলকভাবে জরিমানা আরোপিত হবে।
(iii)   অর্থ আইন, ২০১৫ পরিপত্রে আনিত ব্যাখ্যা :গৃহ-সম্পত্তি খাতের আয় নিরূপণে আয়কর অধ্যাদেশের ধারা ২৫ এর উপ-ধারা
(১) এর ক্লজ (h) অনুযায়ী আবাসিক ভবনের বার্ষিক ভাড়া মূল্যের ২৫% এবং বাণিজ্যিক ভবনের ৩০% আইনানুগভাবে মেরামত, আদায়, ইত্যাদি খরচ হিসেবে অনুমোদন করা হয়। গৃহ-সম্পত্তির আয় গণনায় এরূপ ব্যয় দাবী সত্বেও কোন করদাতা আইনানুগভাবে অনুমোদিত এ খরচের সম্পূর্ণ বা অংশ বিশেষ মেরামত বাবদ খরচ হয়নি- এ যুক্তিতে যদি কোন অংক তার সম্পদ পরিবৃদ্ধির তহবিলের উৎস হিসেবে প্রদর্শন করেন, তবে সমপরিমাণ অংক অর্থ আইন, ২০১৫ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশের ধারা ১৯ এ সংযোজিত উপ-ধারা (৩০) এর বিধানমতে “গৃহ-সম্পত্তি খাতে আয়” হিসেবে গণ্য হবে।
ধরা যাক, একজন ব্যক্তি-করদাতা একটি আবাসিক ভবন ভাড়ায় প্রদান হতে আয় অর্জন করেন। উক্ত ভবনের বার্ষিক ভাড়ামূল্য ১২,০০,০০০/- টাকা। আয়কর রিটার্নে তিনি গৃহ-সম্পত্তির আয় গণনায় আয়কর অধ্যাদেশের ধারা ২৫ এর উপ-ধারা (১) এর ক্লজ (h) অনুযায়ী অনুমোদনযোগ্য খরচ ৩,০০,০০০/- টাকা দাবী করেন। কিন্তু উক্ত অংক খরচ হয়নি দাবী করে তিনি সংশ্লিষ্ট কর বছরের সম্পদ পরিবৃদ্ধির উৎস ব্যাখ্যায় তা তহবিল হিসেবে প্রদর্শন করেন । এ ক্ষেত্রে নব প্রবর্তিত বিধান অনুযায়ী বিধিবদ্ধ ব্যয়ের অব্যয়িত সমুদয় অংক আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা ১৯ এর উপ- ধারা (৩০) এর বিধান অনুসারে“গৃহ-সম্পত্তির আয়” হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ, দাবী অনুযায়ী এ ধরণে অব্যয়িত সমুদয় অংক বা অংশ বিশেষের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে।
ব্যক্তি-করদাতা ব্যতীত অন্যান্য পর্যায়ের করদাতাও যদি হিসাব বিবরণীতে গৃহ-সম্পত্তি খাতের আয় গণনায় দাবীকৃত এরূপ খরচ অব্যয়িত অংক হিসেবে প্রদর্শন করে, সেক্ষেত্রেও এ ধারার বিধানটি সমভাবে প্রযোজ্য হবে।
উদাহরণের সাহায্যে গৃহ স¤পত্তি খাতে আয় নিরুপন এবং কর পরিগণনা নিম্নে দেখানো হলোঃ
ধরা  যাক,  মিসেস লায়লা হক এর একটি  চারতলা আবাসিক বাড়ী রয়েছে। ঐ  বাড়ীর নীচতলায় তিনি সপরিবারে বসবাস করেন। বাকী তিনটি তলা আবাসিক ব্যবহারের জন্য  ভাড়া  দিয়েছেন,  প্রতিটি  তলার  মাসিক  ভাড়া  ১৫,০০০/-  টাকা। এ বছর তিনি পৌরকর বাবদ ১৬,০০০/-  টাকা, ভূমির খাজনা বাবদ ৫০০/-  টাকা এবং গৃহ নির্মাণ ঋণের  ব্যাংক  সুদ বাবদ ২০,০০০/-  টাকা পরিশোধ করেছেন। মিসেস লায়লা হক এর গৃহস¤পত্তি হতে আয়ের হিসাব নীচে দেয়া হলোঃ
মাসিক ভাড়া ১৫,০০০ দ্ধ ৩টি তলা দ্ধ ১২ মাস =            ৫,৪০,০০০/-
বাদঃ অনুমোদনযোগ্য খরচ  
১। মেরামত ব্যয় (ভাড়ার ২৫%)                   ১,৩৫,০০০/-
২। পৌর কর (১৬,০০০/-× ৩/৪)*                   ১২,০০০/-
৩। ভূমি রাজস্ব (৫০০/-× ৩/৪)*                         ৩৭৫/-
৪। গৃহ নির্মাণ ঋণের সুদ (২০,০০০/- × ৩/৪)*    ১৫,০০০/-
                                                                       ১,৬২,৩৭৫/-
        গৃহ স¤পত্তি থেকে নীট আয় =                             ৩,৭৭,৬২৫/-
*স্বনিবাস- ১/৪ অংশ, ভাড়ায় ব্যবহৃত-৩/৪ অংশ
মিসেস লায়লা হক এর নিরূপিত মোট আয় ৩,৭৭,৬২৫/-টাকার বিপরীতে ধার্য্যকৃত করের পরিমাণ এভাবে পরিগণনা করা হবেঃ

মোট আয় করহার করের পরিমাণ
প্রথম ৩,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত  মোট আয়ের উপর --- শূন্য শূন্য
অবশিষ্ট ৭৭,৬২৫/- টাকা আয়ের উপর- ১০% ৭,৭৬২/-
মোট = ৭,৭৬২/-

(৪) কৃষি আয়
(৫) ব্যবসা বা পেশা হতে আয়
(৬) ফার্মের আয়ের অংশ
(৭) অন্যান্য উৎস হতে আয়
(৮) মূলধনী আয়
(৯) স্বামী/স্ত্রী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের আয়

About Author

Profile Picture

Md. Jahangir Alam

Leave a Comment